শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১১

পেশাজীবী বা বৃত্তিজীবীদের ক্ষেত্রে সফলতার দৃষ্টিভঙ্গি কী হওয়া উচিত?

পেশাজীবী বা বৃত্তিজীবীদের ক্ষেত্রে সফলতার দৃষ্টিভঙ্গি কী হওয়া উচিত?

Question: 
পেশাজীবী বা বৃত্তিজীবীদের ক্ষেত্রে সফলতার দৃষ্টিভঙ্গি কী হওয়া উচিত?
Answer: 
পেশাজীবী অর্থাৎ একজন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, লইয়ার, চার্টার্ড একাউন্টেন্ট বা কনসালটেন্ট হিসেবে যখন একজন স্বাধীন পেশায় নিয়োজিত থাকেন তখন সেখানে সাফল্য অর্জনের জন্যে চারটি বিষয় প্রয়োজন। প্রথমত, উদ্যম- নতুন কিছু, বড় কিছু করার। দ্বিতীয়ত, পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট বিশেষ জ্ঞান ও দক্ষতা। তৃতীয়ত, পেশার প্রতি ভালবাসা, আন্তরিকতা এবং দায়িত্ব পালনে বিশ্বস্ততা। চতুর্থত, জনসংযোগ বা পরিচিতি। এই চারটি বিষয় যদি একজন পেশাজীবী আয়ত্ত করেন তিনি শুধু বৈষয়িকভাবে সফল হবেন তা নয়, একজন সৃজনশীল কীর্তিমান পেশাজীবী হিসেবেও স্মরণীয় হবেন। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে, আমাদের সমাজের অধিকাংশ পেশাজীবী বিপুল অর্থের পেছনে ছুটতে গিয়ে সাফল্যের এ শর্তগুলো অবহেলা করেন। ফলে একসময় পেশাজীবীদের যে মর্যাদার চোখে দেখা হতো এখন তা অনেকটাই দুর্লভ।
যেমন, ৭০ এর দশক পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক ছিলেন যাদের নাম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে হয়। কিন্তু এরপর থেকে পট বদল হতে লাগলো। জ্ঞানচর্চায় ব্রতী ছাত্র অন্তঃপ্রাণ শিক্ষকের জায়গায় এসে দাঁড়ালো অর্থোপার্জনের নেশায় পাগল দিনমান প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটতে ব্যস্ত শিক্ষক নামের কিছু আত্মকেন্দ্রিক মানুষ। নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্যে রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি থেকে শুরু করে ছাত্রদের ব্যবহার করতেও তাদের দ্বিধা হয় না। যদিও এখনও অনেক শিক্ষক আছেন যারা সত্যিকার অর্থেই শ্রদ্ধেয় তাদের গভীর জ্ঞান, পান্ডিত্য, ব্যক্তিত্ব এবং আদর্শের জন্যে। কিন্তু এখনকার সাধারণ প্রবণতা হলো রাজনীতির লেজুড়বৃত্তিতে ব্যস্ত শিক্ষক সুযোগ পেলেই ক্লাস বর্জন, ধর্মঘট, রাস্তায় আন্দোলন ইত্যাদির ঘোষণা দেন। এতে তার ছাত্র-ছাত্রীরা জ্ঞানার্জনে পিছিয়ে পড়ুক কিংবা সেশন জ্যামে আটকে পড়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ুক- তাতে তাদের কিছু আসে যায় না। মজার ব্যাপার হলো, নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস না নিয়ে মহা উৎসাহে ধর্মঘট পালন করলেও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিক সময়েই তিনি হাজিরা দেন। কারণ মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে সেখানে তিনি বা তার ছাত্ররা এ জাতীয় আন্দোলনের কথা দূরতম কল্পনাতেও ভাবতে পারেন না।
আসলে একজন পেশাজীবী শিক্ষক হতে পারেন বা ডাক্তার হতে পারেন। কিন্তু নীতিগতভাবে তিনি কখনো বলতে পারেন না যে, আমি পড়াবো না বা আমি রোগী দেখবো না- যতক্ষণ তিনি একজন শিক্ষক বা ডাক্তার হিসেবে নিয়োজিত আছেন। যেকোনো সময় সেবা দেয়ার জন্যে আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। একজন মানুষ যেকোনো সময় এলে যাতে আপনার সেবা পেতে পারে। ধরুন, আপনি একজন দর্জি। এটাও একটা স্বাধীন পেশা। আপনি কাপড় তৈরি করেন, আপনাকে প্রত্যেকের মাপমতোই কাপড় তৈরি করতে হবে। মি. এক্স এর মাপে মি. ওয়াই এর কাপড় বানালে কী হবে? বা আপনি তাকে যে সময় বললেন যে কাপড় তৈরি করে দেয়া হবে তার অন্তত একদিন আগে কাপড়টি তৈরি করে রাখতে হবে। যাতে সে আসার সাথে সাথে তাকে দিতে পারেন। দুইদিন আগে করে রাখতে পারলে আরো ভালো।
আর একজন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারের এটা কখনো ভুলে যাওয়া উচিত নয়, আজকে তার এই অবস্থান তৈরির জন্যে কত নিরন্ন মানুষের ট্যাক্সের টাকায় তিনি প্রায় বিনা পয়সায় বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। শুধু তা-ই নয়, এখন তার যে বেতন সেটার অর্থায়নও হয় এই ট্যাক্সের টাকায়। নিজের বিবেকের কাছেই তার জিজ্ঞেস করা উচিত এই ঋণ বা দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তির কতটা চেষ্টা তিনি করেছেন। ক্লাস বর্জনে বা ক্লাস ফাঁকি দিয়ে তার ঋণের বোঝা কি দিনে দিনে আরো বাড়ছে না? হ্যাঁ, তিনি অবশ্যই স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কিন্তু অর্থের বিনিময়ে যতক্ষণ একটি জায়গায় সেবাদানের চুক্তিতে তিনি আবদ্ধ ততক্ষণ ঐ দায়িত্বই পালন করতে হবে চূড়ান্ত নিষ্ঠার সাথে। যখন যা খুশি করার কোনো অধিকার আর তখন থাকে না বা নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘট করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে যাওয়ার দ্বৈত নীতি অনুসরণ করার সুযোগও আর থাকে না। তা করলে তিনি তার শপথেরই লঙ্ঘন করলেন। আর তখন স্বাভাবিকভাবেই তিনি শ্রদ্ধা হারাবেন। কারণ শুধু পদ-পদবি বা কোনো বিশেষ প্রতিষ্ঠানে থাকলেই শ্রদ্ধা পাওয়া যায় না। শ্রদ্ধা পাওয়ার জন্যে ব্যক্তিকেই কাজ করতে হবে সততা, নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে।
আর বৃত্তির ক্ষেত্রে বিশ্বস্ততা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বস্ততা বলতে বোঝায়- ধরুন, আপনি পরার্মশ দিচ্ছেন একজনকে। পরামর্শদাতা হিসেবে আপনাকে বিশ্বস্ত হতে হবে। যদি আপনি বিশ্বস্ত না হন, যারা পরামর্শ নিতে আসছেন তারা যদি মনে করেন যে সে যা বলছে তা আপনি কাউকে বলে দিতে পারেন। তাহলে আপনি পরামর্শদাতা হিসেবে ব্যর্থ হবেন। কেউ আপনার কাছে পরামর্শের জন্যে আসবে না। তাই আপনাকে আপনার পেশার প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে হবে।

পরীক্ষার্থীর মানসিক চাপ কমাতে মা-বাবার ভূমিকা




পরীক্ষার্থীর মানসিক চাপ কমাতে মা-বাবার ভূমিকা

ডা. মুনতাসীর মারুফ



এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা মানসিক চাপ অনুভব করে। কেননা, শিক্ষার্থীর মাঝে পাবলিক পরীক্ষা সম্পর্কে সমাজ বা পরিবারের বিভিন্ন স্তর থেকে জানতে বা অজান্তে অহেতুক ভয় ঢুকিয়ে দেয়া হয়। এর আগে বহুবার পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হলেও স্কুলে টেস্ট বা প্রি-টেস্টে এসএসসি পরীক্ষার চেয়েও কঠিন প্রশ্নপত্র পার করে এলেও জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষা অনেকের কাছে মৃত্যুদণ্ডের আদেশের সমতুল্য ভীতিকর হয়েই দেখা দেয়।
এই মানসিক চাপ আরো বাড়িয়ে দিতে পারে পরীক্ষা নিয়ে বাবা-মার অযৌক্তিক প্রত্যাশা ও ব্যবহার। অনেকের প্রত্যাশা, সেই ভালো ফলাফলটা হবে তাদের বাবা-মায়ের চাহিদামাফিক। অর্থাৎ কিনা তারা যে ফলাফলকে ভালো মনে করবেন, সন্তানকে সেই ফলাফলই নিয়ে আসতে হবে। অনেক সময় বাস্তবতা বা শিক্ষার্থীর প্রকৃত ক্ষমতা-যোগ্যতা অনুধাবন না করেই তারা প্রত্যাশার এ বোঝা চাপিয়ে দেন। অনেক বাবা-মা তাদের জীবনের অপূর্ণ স্বপ্নগুলো সন্তানের মাধ্যমে পূরণ করতে চান। এর অন্যথা হলে তারা হতাশায় ভোগেন। সন্তানের পরীক্ষার ফলাফল বাবা-মা নিজেদের সামাজিক অবস্থানের নিয়ামক হিসেবে ভাবেন। সন্তান পরীক্ষায় খারাপ করলে সমাজ তাদের ‘ব্যর্থ বাবা-মা’ হিসেবে চিহ্নিত করবে এ উদ্বেগও পেয়ে বসে অনেককে। সবার যোগ্যতা ও ক্ষমতা যে এক রকম নয়-এ সত্যটি যেন তারা বুঝতে চান না। তাদের দৃষ্টিতে সন্তানের প্রত্যাশিত ফলাফলের সামান্য বিচ্যুতিও ক্ষমার অযোগ্য। পাশের বাড়ির ছেলেটির চেয়ে বা ক্লাসে একই বেঞ্চে বসা সহপাঠীর চেয়ে দুই-এক নম্বর পেছনে থাকাও তারা সহজভাবে মেনে নিতে পারেন না। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ‘খারাপ’ ফলাফলের জন্য সন্তানকে বকাবকি, নেতিবাচক সমালোচনা, অন্যদের সঙ্গে তুলনা করে সব সময় পড়াশোনা ও ফলাফল নিয়ে কটাক্ষ করতে, এমনকি শারীরিকভাবে প্রহার করতেও দেখা যায় অনেককে। বাবা-মায়ের ধারণা তারা সেটা করেন সন্তানের ভালোর জন্যই। কিন্তু ফল হতে পারে উল্টো। পরীক্ষার ফলাফলের প্রেক্ষিতে বাবা-মায়ের প্রতিক্রিয়ার পূর্ব অভিজ্ঞতা শিক্ষার্থীর ভেতর ফলাফল নিয়ে অতিরিক্ত উদ্বেগ সৃষ্টি করে। পরীক্ষার পড়া নিয়ে না ভেবে ফলাফলে বাবা-মায়ের প্রতিক্রিয়াই হয়ে ওঠে মূল ভাবনা, যা পড়াশোনায় সহায়তা না করে  উল্টো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
পরীক্ষার্থীর পরীক্ষাজনিত উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা দূর করতে বাবা-মা হতে পারেন সবচেয়ে বড় বন্ধু। এ জন্য সবার আগে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিয়ে বাবা-মায়ের অযৌক্তিক ও ভুল চিন্তা-ভাবনার পরিবর্তন। সন্তানের যোগ্যতা সম্পর্কে সঠিক ধারণা নিন, সেই মতো প্রত্যাশা করুন, ভালো করতে তাকে সহযোগিতা করুন, কিন্তু অতি প্রত্যাশার বোঝা ঘাড়ে চাপিয়ে নয়। বারবার সন্তানের নেতিবাচক সমালোচনা ও অন্যের সঙ্গে তুলনা করবেন না। ‘তোমাকে দিয়ে তো কিছুই হবে না,’ ‘তুমি পারবে না’-বাবা-মায়ের মুখ থেকে এ ধরনের কথা শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস কমিয়ে দেয়। ইতিবাচক থাকুন। সন্তানকেও ইতিবাচকভাবে ভাবতে শেখান। পরীক্ষার দিনগুলোতে সন্তানকে বাড়তি সময় দিন, তার উদ্বেগের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন, দুর্বলতা-ভীতি কাটিয়ে নিজের ওপর বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে তাকে উৎসাহ দিন, সহায়তা করুন। তবে বাড়তি সময় দেয়া মানে পড়ার সময় সর্বক্ষণ সামনে বসে থাকা নয়। এটাও আবার অনেক শিক্ষার্থীর জন্য চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সন্তানের সুষম খাদ্য নিশ্চিত করুন। কিন্তু এ ব্যাপারে অতিরিক্ত মনোযোগ দেখাতে গিয়ে অতিভোজনে বাধ্য করে তার শরীরকে অলস ও নিদ্রাকাতর করে তুলবেন না। এ সময় বেশি খেলেই মেধা বাড়বে-এ ধারণা ঠিক নয়। পরীক্ষার্থীকে একটানা পড়তে বাধ্য করবেন না। পড়ার মাঝে বিরতি নিতে দিন। সুস্থ বিনোদন ও শরীরচর্চায় নিয়মিত কিছুটা সময় ব্যয় করতে দিন। পরীক্ষার আগের রাতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে নিতে সহায়তা করুন। অধিক রাত জাগতে নিরুৎসাহিত করুন। এক বিষয়ের পরীক্ষার পর সেই বিষয়ে কী কী ভুল করল, সেবব খুঁটিয়ে বের না করে পরবর্তী পরীক্ষার প্রস্তুতিতে মনোযোগ দিতে সাহায্য করুন। মনে রাখবেন, পরীক্ষা স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছে একটা চাপের বিষয়। বাবা বা মা হিসেবে আপনি এর সঙ্গে বাড়তি চাপ যোগ করে পরিস্থিতি সন্তানের জন্য অসহনীয় করে তুলবেন না বরং মানসিক চাপমুক্তভাবে পরীক্ষায় অংশ নিতে সন্তানকে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করুন। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

আপনার সন্তান কেন আপনার কথা শোনে না

আপনার সন্তান কেন আপনার কথা শোনে না

  • তিরস্কার বা সারাক্ষণ আদেশ-নির্দেশ না করে সন্তানকে তার করণীয় যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে দিন
    তিরস্কার বা সারাক্ষণ আদেশ-নির্দেশ করতে থাকলে সন্তান ভাবতে পারে যে আপনি বোধ হয় তার প্রতিপক্ষ। কিন্তু আপনি সন্তানের বন্ধু - এই অনুভূতিটি তার বিকাশের জন্যেই জরুরি। আর বড়দের মতো ছোটদের জন্যেও এই ব্যাখ্যাটা জরুরি যে সে কেন কাজটি করবে।
  • আপনার সন্তানকে বুঝতে দিন যে আপনি তাকে বোঝেন
    যত আপনার সন্তান বুঝবে যে আপনি তাকে বোঝেন তত সে আপনার অনুগত হবে। আপনার কথা শুনবে। অতএব তাকে শোনানোর জন্যে আগে তাকে শুনুন। তার কথায় মনোযোগ দিন।তাকে বুঝতে দিন যে আপনি তাকে বোঝেন।তার পরিবর্তন দেখে অবাক হয়ে যাবেন।
  • সন্তানের ব্যাপারে একমত হোন
    সন্তানের ব্যাপারে বাবা-মার ঐকমত্য গুরুত্বপূর্ণ। একই ব্যাপারে বাবা-মা ভিন্ন মত দেবেন না। এতে সন্তান বিভ্রান্ত হয়। আগেই সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে নিন। আর কোনো ব্যাপারে দ্বিমত হলে তা নিয়ে কখনো সন্তানের সামনে বিতর্কে জড়াবেন না। নিজেরা কথা বলুন।
  • সন্তানের প্রশ্নের জবাব দিন
    আপনি যদি আপনার সন্তানের প্রশ্নের জবাব না দেন, জবাবের জন্যে সে হয়তো খুঁজে নেবে এমন কাউকে বা এমন কিছুকে যার পরিণতি আপনার জন্যে অতটা সুখকর না-ও হতে পারে।
  • সন্তানকে তা-ই বলুন যা আপনি নিজেও পালন করেন
    শিশুরা তাদের বাবা-মায়েরা কী বলছে সেটা নয়, কী করছে সেটাই অনুকরণ করে। কাজেই আপনার সন্তানকে এমন কিছু করতে বলবেন না যা আপনি নিজেই করেন না।
  • ভুল করলে মাশুল পেতে দিন, প্রয়োজনে শাস্তি দিন
    আপনার সন্তান যদি বোঝে যে আপনার কথা না শুনেও সে পার পেয়ে যাচ্ছে, তাহলে সে অবাধ্য হতে উৎসাহ পাবে। তাই সারাক্ষণ চিৎকার চেঁচামেচি না করে শান্ত থাকুন, কিছু শাস্তির ব্যবস্থা করুন। এ ব্যাপারে দৃঢ় হতে ভয় পাবেন না। কারণ সন্তান যদি বুঝতে পারে যে এই অবাধ্য হবার জন্যে তাকে শাস্তি পেতে হবে, তাহলে সে সাবধান হবে।
  • একই কথা বার বার বলবেন না
    একই কথা বার বার বললে তার গুরুত্ব কমে যায়। এর চেয়ে ১ বার বলুন। তাকে বুঝতে দিন না শোনার শাস্তি।
  • জেনারেশন গ্যাপকে মিটিয়ে ফেলুন
    সন্তানের সাথে জেনারেশন গ্যাপের একটা কারণ হলো বাবা-মায়েরা চান তারা তাদের ছোটবেলায় যেমন ছিলেন, সন্তানও ঠিক তেমন হবে। ফলে এই অবাস্তব প্রত্যাশার জন্যে সৃষ্টি হয় ভুল বোঝাবুঝি। কাজেই কিছু কিছু ব্যাপারে আপনাকে সহনশীল হতে হবে। সন্তানের চাহিদা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং পছন্দের সাথে আপনার চাহিদা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং পছন্দের একটা ভারসাম্য আনতে হবে। যেমন, প্রযুক্তির ব্যাপারে বর্তমান প্রজন্মের আগ্রহ, দক্ষতা, সম্ভাবনা সবকিছুই পুরনো প্রজন্মের চেয়ে বেশি। এটি যদি বড়রা মেনে নেন, এ গুণের জন্যে তাদের প্রশংসা করেন, সমীহ করেন, তাহলেই কিন্তু একটা সুন্দর বোঝাপড়ার সম্পর্ক তৈরি হয়।
  • আপনার অপূর্ণ স্বপ্নের বাস্তবায়ন সন্তানের মধ্যে দেখতে যাবেন না
    বাবা-মায়েরা অনেক সময় তাদের অপূর্ণ স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখতে চান তার সন্তানের মধ্যে। ফলে সন্তানের জীবনের লক্ষ্য কী হবে তা তারাই ঠিক করে দেন সন্তানের চাওয়া বা সামর্থ্যের বিষয়টিকে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে। আর পরবর্তীতে তার মাশুল দিতে হয় সন্তানকেই। সে না পারে বাবা-মায়ের চাওয়া পূরণ করতে, না পারে নিজের মেধাকে বিকশিত করতে। কাজেই বেড়ে ওঠার একটি পর্যায়ের পরে তার সব ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করে চিন্তা ও সিদ্ধান্তগ্রহণের স্বাধীনতা দিন। এতে সে স্বনির্ভর হয়ে উঠবে।
  • সন্তানের আত্মমর্যাদাবোধকে নষ্ট করবেন না
    শিশুদেরও যে আত্মমর্যাদাবোধ আছে এটা আমরা অনেক সময় ভুলে যাই। আমরা হয়তো অন্যের সামনে তাকে বকাবকি করি, ভুল ধরিয়ে দেই বা অপ্রস্তুত করি। এ ধরনের আচরণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। ‘তোকে দিয়ে কিছু হবে না’- এ জাতীয় কথা বলেও তাকে ছোট করবেন না। ব্যর্থতার প্রসঙ্গ তুলে খোঁটা দেবেন না, আপনার উৎসাহ তার ব্যর্থতাকেও সাফল্যে রূপান্তরিত করতে পারে।

বন্ধুত্ব ধারণা ও বাস্তবতা

দুঃখ আনন্দের মমতাপূর্ণ ভাগীদার ছাড়া জীবন এক বিরান মরুভূমি ছাড়া কিছুই নয় দার্শনিক এমারসন বলেছেন, একজন বন্ধু হচ্ছেন প্রকৃতির সবচেয়ে বড় মাস্টারপিস বন্ধুত্বের গুরুত্ব উপলব্ধি করার জন্যে কবি বা দার্শনিক হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই আপনার আনন্দ এবং দুঃখে আপনার পাশে কেউ না থাকলে আনন্দ যেমন বহুলাংশে মাটি হয়ে যায়, তেমনি দুঃখও সহজে হালকা হয় না মানুষ যখন বেদনাভারাক্রান্ত হয়ে ওঠে তখন বন্ধুর কাছ থেকে সে প্রথম সান্ত্বনা পায়, আর যখন আনন্দে উদ্বেল হয়ে ওঠে তখন আনন্দের খবর সে প্রথম বন্ধুকেই জানায় বন্ধুত্বের সাথে যেহেতু আবেগের ব্যাপার জড়িত সেহেতু বন্ধুত্ব আনন্দের সাথে সাথে সমস্যারও সৃষ্টি করতে পারে তাই বন্ধুত্বের সংজ্ঞা, বন্ধুর কাছ থেকে কতটুকু চাওয়া পাওয়া যেতে পারে সে সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকলে ভুল বোঝাবুঝির বা সমস্যার পরিমাণ অনেক কমে যেতে পারে বন্ধুত্ব কেমন হওয়া উচিত নিয়ে অনেক প্রচলিত ধারণা রয়েছে ধারণাগুলো নিয়ে আমরা যদি একটু আলোচনা করি তাহলে দেখব বাস্তবতা আসলে ভিন্ন ধারণা বাস্তবতার পার্থক্য পরিষ্কার হলে বন্ধুত্ব আরও ¯^vfvweK প্রাণবন্ত হয়ে উঠবে বন্ধুত্ব সম্পর্কিত কয়েকটি প্রচলিত ধারণাকে বাস্তবতার আলোকে বিচার করলেই আমাদের কাছে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে ধারণাগুলো হচ্ছে : 
. ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা একে অন্যের জীবনের সবকিছুতেই ভাগীদার হবে সাধারণভাবে ধারণা প্রচলিত হলেও আধুনিক নগরজীবনে ধারণা বাস্তবসম্মত নয় অধিকাংশের কর্মজীবনের বন্ধু এবং পারিবারিক বন্ধু ভিন্ন আবার পড়শীদের সাথে যে বন্ধুত্ব তা- আলাদা শখ বা আগ্রহের ভিত্তিতে যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে তা- আলাদা আবার ধর্মচর্চার বেলায় দেখা যায় সম্পূর্ণ আলাদা কারোর সাথে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব এক সম্পূর্ণ ¯^vfvweK ঘটনা কারণ মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, জীবনের সব ব্যাপারেই দুই ব্যক্তির মধ্যে আগ্রহের মিল হওয়া খুব দুর্লভ ব্যাপার এমনকি আপনার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধুদেরও এমন কিছু আগ্রহ শখ থাকতে পারে যেগুলোর সাথে আপনার আগ্রহের আদৌ মিল নেই তাছাড়া সদানির্ভরযোগ্য বন্ধুত্ব কামনা, শিশুসুলভ নিরাপত্তাহীনতাবোধেরই প্রকাশ একজন বন্ধুর উপর পুরোপুরি নির্ভরতা অনেক সময়ই দুঃখের কারণ হতে পারে অপরপক্ষ তার সামাজিক পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করলেই প্রথম পক্ষকে দুঃখবোধে পেয়ে বসতে পারে তাই একক বন্ধুত্বের চেয়ে একাধিক বন্ধুত্ব সবসময়ই আবেগগতভাবে ভাল 
. সত্যিকারের বন্ধুত্ব মানে আজীবন বন্ধুত্ব ধারণা সবসময় ঠিক নয় ছোটবেলায় যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে, শিক্ষাজীবনে যে ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে, কর্মজীবনে প্রবেশ করার পর তার অধিকাংশই হারিয়ে যায় আবার বাসস্থান পরিবর্তনের কারণেও পুরানো বন্ধুত্বের জায়গায় নতুন বন্ধুত্বের সৃষ্টি হয় কর্মজীবী মহিলাদের বেলায় ব্যাপারটি আরও সুস্পষ্ট কর্মজীবনে বা শিক্ষাজীবনে অনেকের সাথে বন্ধুত্ব হয়, কর্ম শিক্ষাজীবন ত্যাগ করে পুরোপুরি গৃহিণী হয়ে গেলে তখন বন্ধুত্বের আওতা পুরোপুরি পাল্টে যেতে পারে তবে ধরনের খণ্ডকালীন বন্ধুত্বকেও কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করার কোন প্রয়োজন নেই জীবনের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কালে বিভিন্ন মানুষের সাথে প্রয়োজনীয় আনন্দদায়ক বন্ধুত্ব হতে পারে
. বিপরীত লিঙ্গের কারো সাথে নিষ্কাম বন্ধুত্ব সম্ভব নয় ধারণাও সবসময় সত্যি নয় মনোবিজ্ঞানীরা বলেন, বিপরীত লিঙ্গের সাথে নিষ্কাম বন্ধুত্বের ঘটনাও এখন প্রায়শই দেখা যায় কোন পুরুষ নারীর মধ্যে কোন আগ্রহের বা উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে একটি সুন্দর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সম্ভব হতে পারে মনোবিজ্ঞানীরা অবশ্য সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ধরনের বন্ধুত্বকে কামবর্জিত রাখা কখনও কখনও বেশ কঠিন যখন আপনি কাউকে পছন্দ করতে শুরু করেন এবং ব্যক্তি হিসাবে তার প্রতি আকৃষ্ট হন তখন তার প্রতি যৌন অনুভূতিও সৃষ্টি হতে পারে কিন্তু এই অনুভূতি অনুসারে যে কাজ করতে হবে এমন কোন কথা নেই আপনি অনুভূতিকে মনে মনে ¯^xKvi করে নিয়েও তা সীমার মধ্যে রেখে দিলে সমস্যা না- আসতে পারে
. রক্ত পানির চেয়ে গাঢ় বন্ধুদের চেয়ে আত্মীয়রা ঘনিষ্ঠ ধারণাও সবসময় ঠিক নয় এমনও দেখা গেছে ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের, বোনের সাথে বোনের চিন্তা-চেতনা কোন কিছুরই মিল নেই তাদের বাবা-মা এক- এছাড়া  তাদের মধ্যে আর কোন মিল পাওয়া যায় না এমনও দেখা যায়, একজনের বিপদে ভাই-বোনদের বদলে বন্ধুই এগিয়ে আসে কারণ বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে পছন্দের ভিত্তিতে আর আত্মীয়রা একে অন্যের সাথে রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ রক্ত পানির চেয়ে ঘন হতে পারে, কিন্তু রক্ত জমাট বেঁধে গেলে তা আঠাল হয়ে অকেজো হয়ে যায় তাই অধিকাংশ সময় দেখা যায় বন্ধুরা বন্ধুদের যেভাবে বোঝে অনুভব করে আত্মীয়রা সেভাবে বোঝেও না, অনুভবও করে না
. ভাল বন্ধুদের সমসাময়িক হতে হবে ধারণাও সবসময় ঠিক নয় ২৬ বছরের যুবকের সাথে ৫০ বছরের প্রৌঢ়ের বন্ধুত্ব হতে পারে আর বন্ধুত্ব অত্যন্ত পরিপূরক হতে পারে দুই প্রজন্মের মধ্যে বন্ধুত্ব উভয়ের জন্যে অতিরিক্ত কিছু সুযোগ এনে দিতে পারে বয়স্ক বন্ধু তরুণের জন্যে জ্ঞান, বুদ্ধি, পরামর্শের উৎস হয়ে দাঁড়াতে পারে আর তরুণের কাছ থেকে বয়স্ক পেতে পারে তারুণ্যের উদ্দীপনা
. বিপদে বন্ধুর পরিচয় অধিকাংশ সময়ই কথা ঠিক হতে পারে তবে কখনও কখনও ব্যতিক্রমও দেখা যায় বিপদে বা দুঃসময়ে যে বন্ধুর মত এগিয়ে আসে, অনেক সময় বিপদ কেটে গেলে বন্ধুত্বের সেই তীব্রতা থাকে না কোন কোন মনোবিজ্ঞানী বলেন, দুঃসময়ের বন্ধুত্ব সুসময়েই ভেঙে যায় কারণ সুস্থ বন্ধুত্ব দেয়া-নেয়ার উপর নির্ভরশীল বন্ধুরা পালাক্রমে উৎসাহ, উদ্দীপনা, সহানুভূতি দেয় এবং নেয় কিন্তু কোন কোন মানুষ সহানুভূতি দিতে চায়, নিতে চায় না আবার কেউ কেউ অচেতনভাবে কামনা করে বন্ধু যে ভাবাবেগজনিত সমস্যা বা দুঃসময়ে পড়েছে তা অব্যাহত থাকুক যাতে সে ক্রমাগত সহানুভূতি বিলিয়ে যেতে পারে তাই কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় বন্ধু যখন খারাপ মানসিক অবস্থা থেকে ভাল অবস্থার দিকে এগুতে শুরু করে তখন ওই ত্রাণকর্তা বন্ধুটি নিজের অজ্ঞাতসারে সুপরিবর্তনকে স্যাবোটাজ করতে চেষ্টা করে লক্ষ্য একটিই- যাতে বন্ধুত্বের ধারা অপরিবর্তনীয় থাকে
. ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব বজায় রাখতে হলে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে ধারণাও ঠিক নয় বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, বন্ধুরা অনেক দূরে থাকে ঘন ঘন দেখা-সাক্ষাতের কোন সুযোগ নেই, দীর্ঘদিন পরে হয়তো দেখা হয় কিন্তু দেখা হওয়ার সাথে সাথে তাদের যে অন্তরঙ্গতার প্রকাশ ঘটে তা দেখে কেউ মনে করতে পারে যে এরা সবসময় কাছাকাছি একসাথে আছে যখন উভয়ে উভয়কে অনন্য মনে করে তখন দীর্ঘ বিচ্ছেদ সত্ত্বেও বন্ধুত্ব অব্যাহত থাকে
বয়স বাড়লে নতুন বন্ধু পাওয়া যায় না ধারণাও আসলে ঠিক নয় বয়স বাড়ার সাথে সাথে নতুন নতুন বন্ধুত্ব সৃষ্টি হতে পারে আবার সক্রিয় কর্মজীবন সমাপ্তির পরেও চমৎকার নতুন বন্ধুত্বের সৃষ্টি হতে পারে বন্ধুত্ব সম্পর্কে ধারণা বাস্তবতাগুলো সামনে রাখলে নিয়ে ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা একেবারেই কমে যাবে।