জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

শনিবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১১

প্রাচুর্যের দৃষ্টিভঙ্গি

Question: 
জীবনে কোন ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে সে অবস্থানে প্রাচুর্যের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিৎ?
Answer: 
ব্যর্থতার মাঝে সুপ্ত আছে সাফল্যের বীজ। যত বড় ব্যর্থতা হবে তত আনন্দ করবেন, তত আনন্দ করবেন দেখবেন সাফল্য আসছে। আসলে এটা কিন্তু খুব বাস্তব। যে যত বড় ব্যর্থতা, সাফল্য তত বড় হয়।
এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিক একটি ঘটনা আছে। গজনীর সুলতান ছিলেন মাহমুদ। তার দাস ছিলেন আয়াজ। আয়াজকে সুলতান মাহমুদ খুব পছন্দ করতেন। এমনকি মন্ত্রীদের চেয়েও তাকে বেশি গুরুত্ব দিতেন বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবে। বন্ধুর যে মর্যাদা, কৃতদাস হলেও তার মর্যাদা ছিল সেইরকম। আর এর কারণও ছিলো যে, আয়াজ ছিলেন সুলতানের প্রতি অত্যন্ত বিশ্বস্ত। এ বিশ্বস্ততা কিরকম ছিলো তার একটি উদাহরণ হলো- একবার আয়াজ সুলতানের সাথে যাচ্ছে। পথিমধ্যে তরমুজ ক্ষেত দেখে সুলতানের তরমুজ খেতে ইচ্ছে হলো। সুলতান আয়াজকে তরমুজ নিয়ে আসতে বললেন। আনার পরে ওটা কাটা হলো সুলতান আয়াজকে দিল, আয়াজ তুমি খাও। তো আয়াজ খাচ্ছে আর বলছে আহ! খুব স্বাদ, খুব মিষ্টি! আয়াজের প্রশংসা দেখে সুলতান বললেন যে, এত তৃপ্তির সাথে খাচ্ছে তো একেই দাও। আরো খাও, আরো খাও, আরো খাও। শেষ পর্যন্ত একটা টুকরা বেঁচে গেলা। এই শেষ টুকরাটা সুলতান মুখে তুললেন। আর সাথে সাথে ওয়াক থু করে ফেলে দিলেন। প্রচন্ড তেতো এই তরমুজ আয়াজ কী করে এত অম্লান বদনে খেয়ে গেল তা ভেবে সুলতান বিস্মিত হলেন। আয়াজকে জিজ্ঞেস করলেন কীভাবে এ তরমুজ তুমি খেলে? আয়াজ তখন বললো, জাঁহাপনা যে তরমুজ আপনার হাত থেকে এসেছে তা আদপে যত তেতোই হোক আমার কাছে তা মিছরির চেয়েও মিষ্টি।
কিন্তু সুলতানের এই সুনজরের কারণে আয়াজ পড়লেন মন্ত্রীদের কোপানলে। প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বন্দি হলেন।
জেলখানায় বন্দিদশায় কাটছে তার দিন। কিন্তু আয়াজ তার বিশ্বাসে অটল। যে সুলতান একদিন তার ভুল বুঝতে পারবেন। এবং আজকে হোক কালকে হোক আমি মুক্ত হবোই। দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়। এখনতো কারাবন্দিদের জন্যে কিছু নিয়ম আছে। তখন এসব কিছু ছিলো না। এক টুকরো রুটি- এই হয়তো এক সপ্তাহের বরাদ্দ। বন্দিরা একটু একটু করে জমিয়ে রেখে তাই খেতো। আয়াজও তা-ই। এরকমই একবার আয়াজ এক টুকরো রুটির খানিকটা খেয়ে বাকিটা তুলে রেখে ঘুমাতে গেল। ঘুম থেকে উঠে দেখে ৩ দিনের খাবার সেই রুটির টুকরোটা নিয়ে এক ইঁদুর দৌড়ে পালালো। তাকিয়ে দেখে আয়াজ হেসে উঠল। যাক! তাহলে আমার এখানকার রিজিক শেষ হয়ে আসছে। আমি এখন মুক্তি পাবো। অর্থাৎ বিশ্বাস এবং আশাবাদটা কত!
সে সময় তার মনে হয়েছে, যে না এর চেয়ে খারাপ তো আর কিছু হতে পারেনা এবং এরপরে আমার মুক্তি ছাড়া আর কোনো কিছু নাই। পরের দিনই তিনি মুক্তি পেলেন। আবার সুলতানের সভাসদ হলেন। এই যে বিশ্বাস অর্থাৎ সর্বাবস্থায় শুকরিয়া, সর্বাবস্থায় শোকর আলহামদুলিল্লাহ এবং সর্বাবস্থায় আশাবাদী হওয়া- এটাই হচ্ছে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রাচুর্যের জন্যে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন