সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১১

রবি ঠাকুরের জমিদারি বনাম কবি নজরুলের জঠর জ্বালা

রবি ঠাকুরের জমিদারি বনাম কবি নজরুলের জঠর জ্বালা

দুঃখ যেন তার পিছু ছাড়ছে না। চরম দুঃখ-যাতনা ছিল কাজী নজরুলের জীবন সাথী। ১৯০৭ সালে বয়স যখন আট তখন তিনি পিতা হারান। সে সময়ে দারিদ্রতা আর সৎ ভাইয়ের অবহেলায় তিনি বাউণ্ডেলে জীবন যাপন শুরু করেন। লেটোর দলে, চায়ের দোকানে কাজ করেন। নজরুল যখন দুঃখ-কষ্টের অথৈ দরিয়ায় হাবুডুবু খাচ্ছিলেন তখন তার মা জাহেদা খাতুন বিয়ে করেন তার চাচাকে। কাটা ঘায়ে নূনের ছিটার মতো মনে হলো নজরুলের কাছে। মা বিয়ে করেছিলেন নজরুলের বোন কুলসুমকে বিয়ে দেয়ার নাম করে। কিন্তু তিনি এ বিয়ে মেনে নিতে পারেন নি। লজ্জায় ক্ষোভে নজরুল কোনো দিন তার মায়ের সামনে যান নি। এমনকি ১৯২৩ সালে হুগলির জেলে তার মা দেখা করতে গেলেও তিনি দেখা করেন নি। জাগরণের কবি, পরিবর্তনের কবি, সাম্যের কবি, ইনসাফের কবি, মৈত্রীর কবি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কবি, সত্য প্রকাশের অকুতোভয় কবি, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুলের প্রতি কি আমরা কম অবহেলা করছি? আমরা তো তার সৎ ভাইয়ের মতোই তার প্রতি আচরণ করছি। তাকে যদি আমরা এত অবহেলাই করবো তবে তাকে জাতীয় কবি হিসেবে স্বীকৃতি দিলাম কেন? আমরা আমাদের জাতীয় কবিকে আড়ালে রেখে ভিন দেশের বিশ্ব কবিকে নিয়ে যেভাবে মাতামাতি শুরু করছি তাতে মনে হয় আমরা মাসির ভূমিকায় নেমেছি। অথচ ভারতে রবি ঠাকুরকে নিয়ে এতো মাতামাতি নেই। যে সময়ে রবি ঠাকুর জমিদারি শুরু করেন সে সময়ে নজরুল জঠর জ্বালায় কাতর। এক টুকরো রুটির জন্য চায়ের দোকানে শ্রম বিক্রি করেন। যে বছর রবি ঠাকুর সাহেত্যে নোবেল প্রাইজ পান সে বছর নজরুল দু'কলম বিদ্যা অর্জনের জন্য লজিং বাড়ীতে উঠেন। যে সময়ে রবি ঠাকুর ইংরেজদের অতি প্রিয় 'কবি' সে সময়ে নজরুল ইংরেজদের অতি ভয়ংকর শত্রু। নজরুল চাইলে ইংরেজদের পদলেহন করে দু'পয়সা কামাই করতে পারতেন কিন্তু তিনি তা না করে ইংরেজদের বিরুদ্ধে কবিতা লেখেন, ঘুমন্ত ভারতবাসীকে জাগিয়ে তুলেন। আর আমাদের বিশ্ব কবি দখলদার ইংরেজদের গুণগান গেয়ে কবিতা লেখেন। অসামপ্রদায়িক নজরুল ছিলেন মানব দরদী এক মহান কবি। নজরুল ছিলেন বঞ্চিতদের বলিষ্ট কষ্টস্বর। ধর্ম-বর্ণের উর্দ্ধে ছিলেন তিনি। তিনি হিন্দু-মুসলিম সকলের কল্যাণে কাজ করেছেন। অপরপক্ষে মুসলিমরা শিক্ষিত হউক তা আমাদের বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ চাইতেন না। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন। ভাগ্যের কী নিমর্ম পরিহাস আজ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে রবি বন্দনার জোয়ার বইছে। আমরা আজ নজরুলকে আঁধারে রেখে রবির পূজায় মশগুল। রবির আদর্শের কাঙ্গাল! দুখু মিয়ার দুখের যেন শেষ নেই। রবীন্দ্রনাথের আদর্শ গ্রহণের জন্য আমরা আজ প্রতিযোগিতায় নেমেছি। কার চেয়ে কে বেশী রবীন্দ্র ভক্ত তা প্রমাণের জন্য একেকজন গলদ্ঘর্ম। রবি ঠাকুরের আদর্শ হচ্ছে ভোগের আর নজরুলের আদর্শ ত্যাগের। রবীন্দ্রনাথের আদর্শ হচ্ছে অত্যাচারী রাজ শক্তিকে প্রণাম করা আর নজরুলের আদর্শ হচ্ছে অত্যাচারী রাজ শক্তির বিরোদ্ধে বিদ্রোহ করা, প্রতিবাদ করা, প্রতিরোধ করা। আজ সারা বিশ্বে অত্যাচারী রাজ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। এই সময়ের দাবী হচ্ছে নজরুলের আদর্শে উজ্জিবিত হয়ে আগ্রাসী শক্তির মোকাবেলা করা । রবীন্দ্রনাথের আদর্শ গ্রহণ করে বিশ্ব মোড়লদেরকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করা কোনো আত্মমর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য শোভনীয় নয়। আজ ১১২তম জন্ম দিনে নজরুলের প্রতি রইল আমাদের দোয়া। তাকে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা দান করুন। কলকাতার সুবিধা ভোগী কিছু বুদ্ধিজীবী যারা রবির দরদে আজ প্রায় উম্মাদ তারাও জানেন নজরুল নিমোর্হের কবি, সত্যিকারের সাম্যের কবি আর রবি ঠাকুর সামপ্রদায়িক কবি, অত্যাচারী রাজ শক্তির অনুকুলের কবি। তার পরও তারা জেনে শুনে ভন্ডামী করছেন। এই ভন্ডদের প্রতি নজরুলের ভাষায়- দোহাই তোদের। এবার তোরা সত্যি করে সত্য বল। ঢের দেখালি ঢাক ঢাক গুড় গুড় ঢের মিথ্যা ছল। পেটে এক আর মুখে আরেক এই যে তোদের ভন্ডামী। এতেই তোরা লোক হাসালি বিশ্বে হলি কম দামী।


(  সংগৃহীত )

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন