শনিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১২

‘সাহিত্যের মাত্রা’


কল্যাণীয়েষু,—শ্রাবণের [১৩৪০] ‘পরিচয়’ পত্রিকায় শ্রীমান্‌ দিলীপকুমারকে লিখিত রবীন্দ্রনাথের পত্র—সাহিত্যের মাত্রা—সম্বন্ধে তুমি [‘পরিচারক’-সম্পাদক শ্রীঅতুলানন্দ রায়] আমার অভিমত জানতে চেয়েছ। এ চিঠি ব্যক্তিগত হলেও যখন সাধারণ্যে প্রকাশিত হয়েছে, তখন এরূপ অনুরোধ হয়ত করা যায়, কিন্তু অনেক চার-পাতা-জোড়া চিঠির শেষছত্রের ‘কিছু টাকা পাঠাইবার’ মত এরও শেষ ক’লাইনের আসল বক্তব্য যদি এই হয় যে, ইয়োরোপ তার যন্ত্রপাতি, ধন-দৌলত, কামান-বন্দুক, মান-ইজ্জত সমেত অচিরে ডুববে, তবে অত্যন্ত পরিতাপের সঙ্গে এই কথাই মনে করবো যে, বয়েস ত অনেক হ’ল, ও-বস্তু কি আর চোখে দেখে যাবার সময় পাব!

কিন্তু এদের ছাড়াও কবি আরও যাদের সম্বন্ধে হাল ছেড়ে দিয়েছেন, তোমাদের সন্দেহ তার মধ্যে আমিও আছি। অসম্ভব নয়। এ প্রবন্ধে কবির অভিযোগের বিষয় হ’ল ওরা ‘মত্ত হস্তী’, ‘ওরা বুলি আওড়ালে’, ‘পালোয়ানি করলে’, ‘কসরৎ কেরামত দেখালে’, ‘প্রব্লেম সল্‌ভ করলে’, ‘অতএব ওদের’ ইত্যাদি ইত্যাদি।

এই কথাগুলো যাদেরকেই বলা হোক, সুন্দরও নয়, শ্রুতিসুখকরও নয়। শ্লেষবিদ্রূপের আমেজে মনের মধ্যে একটা ইরিটেশান আনে। তাতে বক্তারও উদ্দেশ্য যায় ব্যর্থ হয়ে, শ্রোতারও মন যায় বিগড়ে। অথচ ক্ষোভপ্রকাশ যেমন বাহুল্য, প্রতিবাদও তেমন বিফল। কার তৈরি-করা বুলি পাখির মত আওড়ালুম, কোথায় পালোয়ানি করলুম, কি ‘খেল্‌’ দেখালুম, ক্রুদ্ধ কবির কাছে এ-সকল জিজ্ঞাসা অবান্তর। আমার ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে। খেলার মাঠে কেউ রব তুলে দিলেই হল অমুক গু মাড়িয়েছে। আর রক্ষে নেই,—কোথায় মাড়ালুম, কে বললে, কে দেখেচে, ওটা গু নয়, গোবর—সমস্ত বৃথা। বাড়ি এসে মায়েরা না নাইয়ে, মাথায় গঙ্গাজলের ছিটে না দিয়ে আর ঘরে ঢুকতে দিতেন না। কারণ, ও যে গু মাড়িয়েচে! এও আমার সেই দশা। 

‘সাহিত্যের মাত্রা’ই বা কি, আর অন্য প্রবন্ধই বা কি, এ কথা অস্বীকার করিনে যে, কবির এই ধরনের অধিকাংশ লেখাই বোঝবার মত বুদ্ধি আমার নেই। তাঁর উপমা উদাহরণে আসে কল – কবজা, আসে হাট-বাজার, হাতি-ঘোড়া, জন্তু-জানোয়ার—ভেবেই পাইনে মানুষের সামাজিক সমস্যায় নরনারীর পরস্পরের সম্বন্ধবিচারে ওরা সব আসেই বা কেন এবং এসেই বা কি প্রমাণ করে? শুনতে বেশ লাগসই হলেই ত তা যুক্তি হয়ে ওঠে না।

একটা দৃষ্টান্ত দিই। কিছুদিন পূর্বে হরিজনদের প্রতি অবিচারে ব্যথিত হয়ে তিনি প্রবর্তক-সঙ্ঘের মতিবাবুকে একখানা চিঠি লিখেছিলেন। তাতে অনুযোগ করেছিলেন যে, ব্রাহ্মণীর পোষা বিড়ালটা এঁটো-মুখে গিয়ে তাঁর কোলে বসে, তাতে শুচিতা নষ্ট হয় না—তিনি আপত্তি করেন না। খুব সম্ভব করেন না, কিন্তু তাতে হরিজনদের সুবিধা হল কি? প্রমাণ করলে কি? বিড়ালের যুক্তিতে এ কথা ত ব্রাহ্মণীকে বলা চলা না যে, যে-হেতু অতিনিকৃষ্ট-জীব বেড়ালটা গিয়ে তোমার কোলে বসেছে, তুমি আপত্তি করোনি, অতএব অতি-উৎকৃষ্ট-জীব আমিও গিয়ে তোমার কোলে বসব, তুমি আপত্তি করতে পারবে না। বেড়াল কেন কোলে বসে, পিঁপড়ে কেন পাতে ওঠে, এ-সব তর্ক তুলে মানুষের সঙ্গে মানুষের ন্যায়-অন্যায়ের বিচার হয় না। এ-সব উপমা শুনতে ভাল, দেখতেও চকচক করে, কিন্তু যাচাই করলে দাম যা ধরা পড়ে, তা অকিঞ্চিৎকর। বিরাট ফ্যাক্টরীর প্রভূত বস্তুপিণ্ড উৎপাদনের অপকারিতা দেখিয়ে মোটা নভেলও অত্যন্ত ক্ষতিকর, এ কথা প্রতিপন্ন হয় না।

আধুনিককালের কল-কারখানাকে নানা কারণে অনেকেই আজকাল নিন্দে করেন, রবীন্দ্রনাথও করেছেন—তাতে দোষ নেই। বরঞ্চ ওইটেই হয়েছে ফ্যাশন। এই বহু-নিন্দিত বস্তুটার সংস্পর্শে যে মানুষগুলো ইচ্ছেয় বা অনিচ্ছেয় এসে পড়েছে, তাদের সুখ-দুঃখের কারণগুলোও হয়ে দাঁড়িয়েছে জটিল—জীবন-যাত্রার প্রণালীও গেছে বদলে, গাঁয়ের চাষাদের সঙ্গে তাদের হুবহু মেলে না। এ নিয়ে আপসোস করা যেতে পারে, কিন্তু তবু যদি কেউ এদেরই নানা বিচিত্র ঘটনা নিয়ে গল্প লেখে, তা সাহিত্য হবে না কেন? 

কবিও বলেন না যে হবে না। তাঁর আপত্তি শুধু সাহিত্যের মাত্রা লঙ্ঘনে। কিন্তু এই মাত্রা স্থির হবে কি দিয়ে? কলহ দিয়ে, না কটুকথা দিয়ে? কবি বলেছেন—স্থির হবে সাহিত্যের চিরন্তন মূল নীতি দিয়ে। কিন্তু এই ‘মূল নীতি’ লেখকের বুদ্ধির অভিজ্ঞতা ও স্বকীয় রসোপলব্ধির আদর্শ ছাড়া আর কোথাও আছে কি? চিরন্তনের দোহাই পাড়া যায় শুধু গায়ের জোরে আর কিছুতে নয়। ওটা মরীচিকা।

কবি বলছেন, “ উপন্যাস-সাহিত্যেরও সেই দশা। মানুষের প্রাণের রূপ চিন্তার স্তূপে চাপা পড়েছে।” কিন্তু প্রত্যুত্তরে কেউ যদি বলে, “উপন্যাস-সাহিত্যের সে দশা নয়, মানুষের প্রাণের রূপ চিন্তার স্তূপে চাপা পড়েনি, চিন্তার সূর্যালোকে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে,” তাকে নিরস্ত করা যাবে কোন্‌ নজির দিয়ে? এবং এরই সঙ্গে আর একটা বুলি আজকাল প্রায়ই শোনা যায়, তাতে রবীন্দ্রনাথও যোগান দিয়েছেন এই বলে যে, “যদি মানুষ গল্পের আসরে আসে, তবে সে গল্পই শুনতে চাইবে, যদি প্রকৃতিস্থ থাকে।” বচনটি স্বীকার করে নিয়েও পাঠকেরা যদি বলে—হাঁ, আমরা প্রকৃতিস্থই আছি, কিন্তু দিন-কাল বদলেছে এবং বয়েসও বেড়েছে; সুতরাং রাজপুত্র ও ব্যাঙ্গমা-ব্যাঙ্গমীর গল্পে আমাদের মন ভরবে না, তা হলে জবাবটা যে তাদের দুর্বিনীত হবে, এ আমি মনে করিনে। তারা অনায়াসে বলতে পারে, গল্পে চিন্তাশক্তির ছাপ থাকলেই তা পরিত্যাজ্য হয় না কিংবা বিশুদ্ধ গল্প লেখার জন্যে লেখকের চিন্তাশক্তি বিসর্জন দেবারও প্রয়োজন নাই।

কবি মহাভারত ও রামায়ণের উল্লেখ করে ভীষ্ম ও রামের চরিত্র আলোচনা করে দেখিয়েছেন, ‘বুলি’র খাতিরে ও-দুটো চরিত্রই মাটি হয়ে গেছে। এ নিয়ে আমি আলোচনা করব না, কারণ ও-দুটো গ্রন্থ শুধু কাব্যগ্রন্থই নয় ধর্মপুস্তক ত বটেই, হয়ত বা ইতিহাসও বটে। ও-দুটি চরিত্র কেবলমাত্র সাধারণ উপন্যাসের বানানো চরিত্র নাও হতে পারে, সুতরাং সাধারণ কাব্য-উপন্যাসের গজকাঠি নিয়ে মাপতে যেতে আমার বাধে।
চিঠিটায় ইন্‌টালেক্‌ট শব্দটার বহু প্রয়োগ আছে। মনে হয় যেন কবি বিদ্যে ও বুদ্ধি উভয় অর্থেই শব্দটার ব্যবহার করেছেন। প্রব্লেম শব্দটাও তেমনি। উপন্যাসে অনেক রকমের প্রব্লেম থাকে, ব্যক্তিগত, নীতিগত, সামাজিক, সাংসারিক, আর থাকে গল্পের নিজস্ব প্রব্লেম, সেটা প্লটের। এর গ্রন্থিই সবচেয়ে দুর্ভেদ্য। কুমার সম্ভবের প্রব্লেম, উত্তরকাণ্ডে রামভদ্রের প্রব্লেম, ডল্‌স হাউসের নোরার প্রব্লেম, অথবা যোগাযোগের কুমুর প্রব্লেম একজাতীয় নয়। যোগাযোগ বইখানা যখন ‘বিচিত্রা’য় চলছিল এবং অধ্যায়ের পর অধ্যায় কুমু যে হাঙ্গামা বাধিয়েছিল, আমি ত ভেবেই পেতুম না ঐ দুর্ধর্ষ প্রবলপরাক্রান্ত মধুসূদনের সঙ্গে তার টাগ-অফ-ওয়ারের শেষ হবে কি করে? কিন্তু কে জানত সমস্যা এত সহজ ছিল—লেডি ডাক্তার মীমাংসা করে দেবেন একমুহূর্তে এসে। আমাদের জলধর দাদাও প্রব্লেম দেখতে পারেন না, অত্যন্ত চটা। তাঁর একটা বইয়ে এমনি একটা লোক ভারী সমস্যার সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু তার মীমাংসা হয়ে গেল অন্য উপায়ে। ফোঁস করে একটা গোখরো সাপ বেরিয়ে তাকে কামড়ে দিলে। দাদাকে জিজ্ঞাসা করেছিলুম, এটা কি হল? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন, কেন, সাপে কি কাউকে কামড়ায় না?

পরিশেষে আর একটা কথা বলবার আছে। রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, “ইব্‌সেনের নাটকগুলি ত একদিন কম আদর পায়নি, কিন্তু এখনি কি তার রং ফিকে হয়ে আসেনি, কিছুকাল পরে সে কি আর চোখে পড়বে?” না পড়তে পারে, কিন্তু তবুও এটা অনুমান, প্রমাণ নয়। পরে একদিন এমনও হতে পারে, ইব্‌সেনের পুরানো আদর আবার ফিরে আসবে। বর্তমান কালই সাহিত্যের চরম হাইকোর্ট নয়





(শ্রী  শরৎচন্দ্র )




বুধবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১২

দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন

সদাচারী হতে হলে আমাদেরকে আমাদের সনাতন দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। আসলে দৃষ্টিভঙ্গিটা কি? দৃষ্টিভঙ্গি হচ্ছে আপনার চিন্তা চেতনার দিক। আপনি কোন দিকে ভাবছেন । আপনার কিন্তু ভাববার ও কাজ করবার যথেষ্ট ¯^vaxbZv রয়েছে। সৃষ্টিকর্তা আপনাকে সেভাবেই তৈরী করেছেন। আর এই ভাবনা বা দৃষ্টিভঙ্গি আপনাকে পরিচালিত করতে পারে ভালোর দিকে বা খারাপের দিকে। দৃষ্টিভঙ্গির একটা সাধারন উদাহরন হতে পারে এইরকম : ধরুন আধা গেলাস পানি। দুজন মানুষ এই পানির গেলাসটার দিকে তাকিয়ে আছে । একজন বলল এই গেলাসটি অর্ধেক খালি। আরেকজন বলল , এই গেলাসিটি অর্ধেক ভরা । তাহলে একই জিনিস দুজন মানুষ কিন্তু দুভাবে দেখেছে। এটাই হলো দৃষ্টিভঙ্গরি পার্থক্য। দৃষ্টিভঙ্গি কে আমরা নিয়্ত ও বলতে পারি। রসুলুল্লাহ (সা) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীস হচ্ছে - 'নিয়ত সকল কর্মের অঙ্কুর' । অর্থ্যাৎ নিয়ত বা দৃষ্টিভঙ্গি আপনাকে ভালোর দিকে কিংবা খারাপের দিকে চিন্তা করতে সাহায্য করে। আপনি কি রিঅ্যাকটিভ হবেন না প্রো-এ্যাকটিভ হবেন তা নির্ধারিত হবে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে। জীবনকে আপনি ইতিবাচক না নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখেন সেটা নির্ধারণ করবে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি। আসলে একজন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন তার পরিবর্তনের জন্য প্রথম প্রয়োজন। দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সদাচারণের সম্পর্ক কি? আপনি যদি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ধারণ করেন বা ধারণ করতে শেখেন , তাহলে আপনি সহজেই একজন সদাচারী মানুষে রূপান্তরিত হতে পারবেন। যেমন , কোন মানুষের প্রতি আপনার দৃষ্টিভঙ্গি নেতিবাচক, তাহলে আপনি কি মনে প্রানে তার সাথে ভালো ব্যবহার করতে পারবেন? ভালো ব্যবহারটা তখনই সম্ভব যখন আপনি আপনার সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গিকে ইতিবাচক করে তুলতে পারবেন। জীবনের যে কোন ঘটনাকে বিশ্লেষন করলে আপনি তার মধ্যে থেকে ভালো বা খারাপ উভয় দিকই বের করতে পারবেন। যেমন ধরুন , আপনার চাকুরী চলে গেলো। এটা একটা খারাপ ঘটনা। কিন্তু আপনি যদি এই ব্যপারটাকেই ইতিবাচক হিসাবে ধরে নতুন চাকুরীর চেষ্টা করেন, তাহলে আপনি এর চেয়েও ভালো চাকুরীর সন্ধান পেতে পারেন । আর বিষয়টাকে আপনি আপনার জীবনের শেষ হিসাবে ধরে নিলে সামনে এগোনোই দুস্কর হয়ে যাবে।
সুতারং আপনি ভালো হবেন কিনা বা নিজের পরিবর্তন করবেন কিনা তার একটা বড় নিয়ামক হচ্ছে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি। আপনার দৃষ্টিভঙ্গি যদি নিজের ও অপরের পরিবর্তনের পক্ষে হয়, তাহলে আপনার পক্ষে সদাচারী হওয়া বা সদাচারী মানুষ ও সমাজ গড়ে তোলা খুবই সহজ।
যুদ্ধটা হচ্ছে ‌'আমি যেমন আছি তেমন থাকবো' আর 'আমি পরিবর্তন হবো, সদাচারী হবো' - এই দুই আমির মধ্যে। আর আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিই এই দুই আমির মধ্যে পার্থক্য গড়ে তুলবে, আমাদেরক সদাচারী মানুষ হিসাবে গড়ে তুলবে এবং আমাদেরকে পরিবর্তন হতে সাহায্য করবে।
ধন্যবাদ সবাইকে।

সোমবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১২

কিছু কথা ... অবশ্য না পড়লেও হয় !

একটি জরুরী সার্জারির জন্য তাড়াহুড়ো করে এক ডাক্তারকে হাসপাতালে ডেকে পাঠানো হল...সে তড়িৎ গতিতে হাসপাতালে পৌঁছে গেলো...হাসপাতালে ঢুকেই সে নিজেকে দ্রুত প্রস্তুত করে নিল সার্জারির জন্য..

এরপর সার্জারির ব্লক এ গিয়ে সে দেখল রোগীর ( একটি ছোট্ট ছেলে ) বাবা ওখানে পায়চারি করছে ডাক্তারের অপেক্ষায় , ডাক্তার কে দেখামাত্র লোকটি চেঁচিয়ে উঠল- আপনার আ...সতে এত দেরি লাগে? দায়িত্ববোধ বলতে কিছু আছে আপনার? আপনি জানেন আমার ছেলে এখানে কতটা শোচনীয় অবস্থায় আছে ?

ডাক্তার ছোট্ট একটা মুচকি হাসি হেসে বলল- " আমি দুঃখিত, আমি হাসপাতাল এ ছিলাম না, বাসা থেকে তাড়াহুড়ো করে এলাম, তাই খানিক দেরি হল, এখন আপনি যদি একটু শান্ত হন, তবে আমি আমার কাজ টা শুরু করি?

লোকটি এবার যেন আরও রেগে গেলো, ঝাঁঝাঁলো স্বরে বলল- " ঠাণ্ডা হব? আপনার সন্তান যদি আজ এখানে থাকতো? আপনার সন্তান যদি জীবন মৃত্যুর মাঝে দাঁড়িয়ে থাকতো, তবে আপনি কি করতেন? শান্ত হয়ে বসে থাকতেন??

ডাক্তার আবার হাসলেন আর বললেন " আমি বলব পবিত্র গ্রন্থে বলা হয়েছে মাটি থেকেই আমাদের সৃষ্টি আর মাটিতেই আমরা মিসে যাব! ডাক্তার কাউকে দীর্ঘ জীবন দান করতে পারেন না... আপনি আপনার সন্তান এর জন্য প্রার্থনা করতে থাকুন আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব...

লোকটি পুনরায় রাগত স্বরে বলল- অন্যকে উপদেশ দেয়া খুবই সহজ...আপনার এমন পরিস্থিথী হলে বুঝতেন...

এরপর ডাক্তার সার্জারির রুম এ চলে গেলো, ২ ঘণ্টার মত লাগলো , শেষে হাসি মুখে ডাক্তার হাসি মুখে বের হয়ে এলেন, "আলহামদুলিল্লাহ অপারেশন সফল" এরপর উত্তরের অপেক্ষা না করেই ডাক্তার আবার বলে উঠলেন- আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে নার্স কে জিজ্ঞেস করুন, বলে তিনি চলে গেলেন...

এরপর লোকটি নার্স কে বললেন- এই ডাক্তার এত নিষ্টুর কেন? তিনি কি আর কিছুক্ষণ এখানে থাকতে পারতেন না...আমি ওনাকে আমার সন্তান এর ব্যাপারে কিছু জিজ্ঞেস করতাম...!

তখন নার্স জানালেন- ডাক্তার এর ছেলে আজ সকালে মারা গেছেন রোড এক্সিডেন্ট এ, তিনি আপনার ফোন পেয়ে ওনার ছেলের জানাজা থেকে উঠে এসেছেন , এখন আবার দৌড়ে চলে গেলেন- কবর দিতে..!

Moral- একজন মানুষ কে কখনও তার বাইরের আচরন দেখে যাচাই করবেন না, কারন আপনি কখনই জানেন না তিনি কিসের মাঝে আছেন !

দৃষ্টিভঙ্গি মানে কী? দৃষ্টিভঙ্গি কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?

জীবনদৃষ্টি বা দৃষ্টিভঙ্গি কথাটার মানে হচ্ছে জীবনকে আমি কীভাবে দেখছি। জীবন সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি কী বা জীবন সম্পর্কে আমার সিদ্ধান্ত কেমন হওয়া উচিত এসব বিষয়ে একটা সুস্পষ্ট অভিমত। আর জীবনকে সুন্দর করার জন্যে যে একটি জিনিসের প্রয়োজন, তাহলো সঠিক জীবনদৃষ্টি। বাকি সবকিছু তখন এমনিই চলে আসে। কারণ চাবিটা যদি ঠিক থাকে আপনি তালাটা খুলতে পারবেন। তা নাহলে যত চাবি থাকুক আপনার কাছে, এটা যদি ঐ তালার চাবি না হয়, তাহলে সেই তালা খোলা যাবে না। জীবনের তালা, জীবনের বদ্ধ দরজা খোলার জন্যে যে সঠিক চাবিটি দরকার সেই চাবিটি অর্জন করার জন্যে প্রয়োজন সঠিক জীবনদৃষ্টি।
আসলে সকল বাস্তবতার নির্মাতা মস্তিষ্ককে যথাযথভাবে ব্যবহার করার জন্যে প্রয়োজন সুসংহত মানসিক প্রস্ত্ততি। আর মানসিক প্রস্ত্ততির ভিত্তি হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি, নিয়ত বা অভিপ্রায়। কারণ মন পরিচালিত হয় দৃষ্টিভঙ্গি বা নিয়ত দ্বারা। আর মস্তিষ্ককে চালায় মন। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ গবেষণা করেছেন মন ও মস্তিষ্কের সম্পর্ক নিয়ে। ডা. এলেন গোল্ডস্টেইন, ডা. জন মটিল, ডা. ওয়াইল্ডার পেনফিল্ড ও ডা. ই রয় জন দীর্ঘ গবেষণার পর বলেছেন, একজন প্রোগ্রামার যেভাবে কম্পিউটারকে পরিচালিত করে, তেমনি মন মস্তিষ্ককে পরিচালিত করে। মস্তিষ্ক হচ্ছে হার্ডওয়্যার আর মন হচ্ছে সফটওয়্যার। নতুন তথ্য ও নতুন বিশ্বাস মস্তিষ্কের নিউরোনে নতুন ডেনড্রাইট সৃষ্টি করে। নতুন সিন্যাপসের মাধমে তৈরি হয় সংযোগের নতুন রাস্তা। বদলে যায় মস্তিষ্কের কর্ম প্রবাহের প্যাটার্ন। মস্তিষ্ক তখন নতুন দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে নতুন বাস্তবতা উপহার দেয়। নতুন বাস্তবতা ভাল হবে না খারাপ হবে, কল্যাণকর হবে না ক্ষতিকর তা নির্ভর করে মস্তিষ্কে দেয়া তথ্য বা প্রোগ্রাম-এর ভাল-মন্দের উপর। কল্যাণকর তথ্য ও বিশ্বাস কল্যাণকর বাস্তবতা সৃষ্টি করে আর ক্ষতিকর তথ্য বা বিশ্বাস ক্ষতিকর বাস্তবতা উপহার দেয়। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, জীবনের নতুন বাস্তবতার চাবিকাঠি হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি বা নিয়ত।
বিজ্ঞানীরা বলেন দৃষ্টিভঙ্গি দুধরনের। এক. প্রো-একটিভ। দুই. রি-একটিভ। প্রো-একটিভ অর্থ হচ্ছে যে কোন পরিস্থিতিতে উত্তেজিত বা আবেগপ্রবণ না হয়ে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত ও প্রদক্ষেপ গ্রহণ। প্রো-একটিভ অর্থ হচ্ছে অন্যের কাজের প্রতিক্রিয়া হিসেবে কোনো কাজ বা আচরণ না করা। সর্বাবস্থায় নিজের লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে আচরণ ও কর্মপন্থা অবলম্বন করা। প্রো-একটিভ অর্থ হচ্ছে কি কি নেই তা নিয়ে হা-হুতাশ না করে যা আছে তা নিয়েই সুপরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করা। প্রো-একটিভ দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় সাফল্য ও বিজয় ছিনিয়ে আনে।
অপরদিকে রি-একটিভ দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় ব্যর্থতা, হতাশা ও অশান্তি সৃষ্টি করে। রি-একটিভ হলে নিয়ন্ত্রণ তখন নিজের হাতে থাকে না। নিয়ন্ত্রণ চলে যায় অন্যের হাতে। আপনি যখন অন্যের কথায় কষ্ট পান, অন্যের কথায় রেগে যান, অন্যের আচরণে ক্রোধে ফেটে পড়েন, অন্যের তোষামোদিতে উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন, অন্যের চাটুকারিতায় গলে যান, অন্যের কথায় নাচেন, তখন নিয়ন্ত্রণ আর আপনার হাতে থাকে না। নিয়ন্ত্রণ চলে যায় অন্যের হাতে।


( Collected )

রবিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১২

জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণের টিউটোরিয়াল

দুনিয়াটা একটা জীবনের খেলাঘর। কি চমকে দিলাম নাকি ???? এই কথাটি বলে??? প্রিয় পাঠকঃ সত্যিই কি আপনাদের চিন্তা হয় না যে জীবনের খেলাঘরে আমরা খেলছি কেবল কাঠের পুতুলের মত। আমরা খেলছি দুনিয়ার চাওয়া পাওয়া,লাভ লোকসান নিয়ে। কেউ কি ভেবে দেখেছেন আমরা যে এই দুনিয়ায় এসেছি তার প্রকৃত উদ্দেশ্য কি???? কি উদ্দেশে মহান আল্লাহ্‌ আমাদের সৃষ্টি করেছেন??? এবং আমরা দুনিয়ায় এসে কতটুকুই বা আমাদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হয়েছি??? কতটুকুই বা কুরআন ও সুন্নাহ অনুসরণ করে জীবনের পথে চলছি ??? আমি বিশিষ্ট মুসলিম চিন্তাবিদ ও ইসলামী বক্তা ডাঃ জাকির নায়েকের "আমাদের জীবনের লক্ষ্য" সম্পর্কিত আলোচনা শুনে সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি। যা আমাকে সত্যিই ভাবিয়ে তুলেছে আমাদের জীবনের প্রকৃত লক্ষ্য কি হওয়া উচিৎ সে সম্পর্কে। আর দেরি না করে চলুন আলোচনায় চলে যাই......
আজকে বিশ্বের প্রতিটি মানুষ কি চিন্তা করে জানেন????? অনেক টাকা বেতনের চাকরি করবো, আয়ের ভিত্তিতে চলাফেরা খাওয়া, দাওয়া , পোশাক আশাক পড়বো। এই তো জীবন। আর কি কিছু দরকার আছে জীবনে?????
যেকোনো মানুষের জীবনে লক্ষ্যটা নির্ধারণ করা কিন্তু সবচেয়ে বড় ব্যাপার।কারণ লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করেই কাজের ডালপালা, শাখা প্রশাখা সম্প্রসারিত হয়। আমাদের সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে যারা সবসময় নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত থাকে, আবার কেউ বাবা মাকে নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকে, আবার কেউ স্বামী স্ত্রীর ইচ্ছা অনিচ্ছা কে বেশি মূল্য দেয়, আবার কেউ সন্তানের চাওয়া পাওয়াকে তার জীবনের মুখ্য উদ্দেশ্য হিসেবে বিবেচনা করে কাজ করতে থাকে। আবার কেউ কেউ আছে প্রতিবেশী কেন্দ্রিক, প্রতিবেশীর সাথে সবসময় প্রতিযোগিতা করায় ব্যস্ত। আবার কেউ কেউ আছে বন্ধুদের সাথে প্রতিযোগিতা করায় সদা ব্যস্ত। আবার কেউ কেউ নিজের শত্রুদের বিরুদ্ধে সারাদিন পরিকল্পনা করতে থাকে কিভাবে প্রতিশোধ তোলা যায়। অর্থাৎ "ইটের জবাব পাথরের মাধ্যমে দিতে হবে" এই চিন্তায় সদা ব্যস্ত। হায়রে সমাজ!!!!!! একি তোমার বেহাল দশা???? এটাই কি আশান্বিত???? হ্যায় চলছে সমাজের চাকা। আমরা কেবলই ঘুরপাক খাচ্ছি এ চাকায়।
প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও বক্তা ডাঃ জাকির নায়েক মানুষের জীবনের লক্ষ্যকে এভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছেন, যা সত্যিই মনোমুগ্ধকর। ইসলামিক এর পুরো অর্থ বিশ্লেষণ করলেই আমরা এর উত্তর পেয়ে যাবো। "আই"<b></b> দ্বারা তিনি বোঝাতে চেয়েছেন "ইসলামিক" অর্থাৎ মানুষের লক্ষ্য অবশ্যই কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে হওয়া বাঞ্ছনীয়।"এস" দ্বারা তিনি বোঝাতে চেয়েছেন "প্যাসিফিক"। একটা উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টা আরও পরিষ্কার হতে পারে। যেমনঃ কোন শিক্ষক পাখী শিকারের শিক্ষা দিচ্ছিলেন ছাত্রদের। তিনি ছাত্রদের বললেন..." আমি যতক্ষণ না বলবো তোমরা তীর ধনুক পাখিটির দিকে তাক করে থাকবে কিন্তু তীর ছুড়বে না"।তারপর শিক্ষক ছাত্রদের একে একে প্রশ্ন করলেন। প্রথম ছাত্রকে বললেন," তুমি কি দেখতে পাচ্ছ???"তখন সে উত্তর দিল আমি বন,গাছ,ও পাখিটি দেখতে পাচ্ছি। দ্বিতীয় জনকে প্রশ্ন করা হলে সে উত্তর দিল" আমি গাছ,গাছের ডালপালা ও পাখিটিকে দেখতে পাচ্ছি। তারপর তৃতীয় ছাত্রকে একই প্রশ্ন করা হলে সে উত্তর দিলঃ" আমি গাছের ডালপালা, পাখিটি,এবং পাখিটির চোখ দেখতে পাচ্ছি। ৪র্থ ছাত্রকে যখন প্রশ্ন করা হলো তখন সে উত্তর দিলঃ''আমি শুধু পাখিটির চোখ দেখতে পাচ্ছি আর কিছুই দেখতে পাচ্ছি না"।সুতরাং এইরকম ৪র্থ ছাত্রের মতো জীবনের লক্ষ্য অবশ্যই নিদৃষটো হতে হবে। মানুষের জীবনের লক্ষ্য অবশ্যই লুকরেটিভ অর্থাৎ লাভজনক হতে হবে এই দুনিয়ার জন্য পাশাপাশি পরকালের আযাব থেকে মুক্তি দানের জন্য। কিন্তু পরকালের মুক্তির বিষয়টিই এখানে প্রাধান্য পাবে। মহান আল্লাহ্‌ সূরা বাকারাহ এর ২০১ নম্বর আয়াতে বলেছেন......আবার এমন কতক লোক আছে যারা বলে"হে আমাদের প্রভু! তুমি আমাদের দুনিয়া ও আখিরাতে মঙ্গল দান কর এবং আমাদেরকে আগুনের শাস্তি হতে রক্ষা কর।"
মানুষের লক্ষ্য অবশ্যই''এপ্রোপ্রিয়েট" অর্থাৎ যথোপোযুক্ত হতে হবে। লক্ষ্য অবশ্যই "মেজারেবল" অর্থাৎ পরিমাপযোগ্য হতে হবে। যেমনঃকোন স্থপতি যদি মনে করেন যে সে দুনিয়ার সবচেয়ে উঁচু দালান নির্মাণ করতে চান। এক্ষেত্রে তিনি উদাহরণ হিসেবে আবুধাবিতে যে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু বিল্ডিং আছে তার চেয়ে উঁচু বিল্ডিং তৈরির কথা বলতে পারেন।লক্ষ্য অবশ্যই "ইনটেনশন" এর উপর নির্ভরশীল।নিয়তের উপর নির্ভর করেই প্রতিটি কাজ সম্পাদিত হওয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে নিয়ত অবশ্যই আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জন হতে হবে। লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে "কনসিসটেনন্সি" রক্ষা করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।যেমনঃ কোন ব্যক্তি যদি মনে করেন যে পুরো রমজানের ৩০ দিনে প্রতিদিন একটু একটু করে কুরআন পড়বেন। ধারাবাহিকভাবে পড়তে পড়তে রমজান শেষে দেখা যাবে কুরআন পড়া শেষ হয়েছে। এভাবে প্রত্যেক ব্যক্তিই যদি তার লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করে তবে লক্ষ্য অবশ্যই অর্জিত হয় বলে আশা করা যায়।
এক্ষেত্রে ডাঃ জাকির নায়েক পোলিওতে আক্রান্ত ১৯৬০ সালের অলিম্পিকে সোনাজয়ী উইলমা রুডলফ্‌ এর ঘটনাটিকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করেছেন।উইলমা ছিল মূলত প্রতিবন্ধী একজন শিশু।উইলমার মা সবসময় উইলমাকে সাহস যোগাতো জীবনে চলার পথে। মার প্রেরণায়ই তার বয়স যখন ৯-১৩ বছরের মধ্যে তখন সে দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে এবং লাস্ট হয়।তারপর উইলমা একসময় ১৯৬০ সালের অলিম্পিকের জন্য নির্বাচিত হয় এবং দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে।একে একে সে ১০০ মিটার দৌড়, ২০০ মিটার স্প্রিনট্‌, ৪০০ মিটার রীলে সবগুলোতেই অংশগ্রহণ করে ৩টি স্বর্ণপদক অর্জন করে। যা ছিল মূলত ১৯৬০ সালের অলিম্পিকে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় একটি সত্য ঘটনা।
এখন যে বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে তা হলো তার লক্ষ্য "ইসলামিক" ছিল কিনা?????? "আই" মানে ইসলামিক বিধিনিষেধ মেনে কুরআন ও সুন্নাহ্‌ মোতাবেক ছিল কিনা??? মনে হয়না তার লক্ষ্য কুরআন ও সুন্নাহ্‌ মোতাবেক ছিল।''এস" দ্বারা স্পেসিফিক অর্থাৎ তার লক্ষ্য কি নিদৃষ্ট ছিল??? অবশ্যই । তার লক্ষ্য ছিল দৌড় প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করা। "এল" দ্বারা বুঝানো হয়েছে তার লক্ষ্য কতটা লুকরেটিভ ছিল???? অর্থাৎ তার প্রধান উদ্দেশ্য কি আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জন???? এটা ততক্ষণ সম্ভব নয় যতক্ষণ উইলমা তার অর্জিত স্বর্ণপদকসমূহ আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সমর্পণ না করে।"এ" দ্বারা বুঝানো হয়েছে লক্ষ্য "এপ্রোপ্রিয়েট" ছিল কিনা??? উইলমার লক্ষ্য অবশ্যই যথোপযুক্ত ছিল।কারণ তার লক্ষ্য ছিল দৌড় প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করা।"এম" দ্বারা বুঝানো হয়েছে তা "মেজারেবল" বা পরিমাপযোগ্য কিনা???? হ্যায় অবশ্যই তা পরিমাপযোগ্য। "আই'' দ্বারা "ইনটেনশনকে" বুঝানো হয়েছে। যদি উইলমার "ইনটেনশন" থেকে থাকে খ্যাতি অর্জন করা তবে তা সে অবশ্যই পেয়েছে। কিন্তু আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জন করেছে কিনা তা আমরা জানিনা।"সি" দ্বারা এখানে "কনসিসটেনন্সি" বা "ধারাবাহিকতাকে" বোঝানো হয়েছে। উইলমা তার লক্ষ্য অর্জনে ধারাবাহিকভাবে চেষ্টা করেছে কিনা???? হ্যায় তার চেষ্টায় ধারাবাহিকতা ছিল।
আর একজন ব্যক্তির কথা না বললেই নয় তিনি হচ্ছেন ''শেখ আহামেদ দিদাদ"।যিনি ডাঃ জাকির নায়েককে শারীরিক ডাক্তার থেকে মানুষের মনের ডাক্তারে রূপান্তরিত করেছেন। শেখ আহামেদ দিদাদ খুবই সাদাসিদে জীবন যাপন করতেন। তিনি বিক্রেতার চাকুরী করতেন। ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় তিনি তার পড়াশুনা ছাড়তে বাধ্য হন। তিনি ইন্ডিয়াতে জন্ম নিয়েও মাতৃভূমি ছেড়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় যেয়ে বসবাস করতে বাধ্য হন। সেখানে তিনি খ্রিষ্টান পাদ্রীদের দ্বারা বিভিন্নভাবে নির্যাতনের স্বীকার হন। তখন তিনি চিন্তা করলেন এই সকল খ্রিষ্টান পাদ্রীদের যথোপযুক্ত উপায়ে উত্তর দেওয়া প্রয়োজন। এরই প্রেক্ষিতে তিনি মাওলানা " ''রাহমতুল্লাহ কারানভির" "ইজহারুল হক"বইটি পড়লেন। পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের মূল বিষয়গুলোও পড়লেন। এইভাবে তিনি আল্লাহ্‌র পথে সংগ্রামে লিপ্ত থেকে কাজ করতে থাকলেন। তারপর ১৯৮৪ সালে তিনি তখনকার দিনের প্রসিদ্ধ খ্রিষ্টান বক্তা ''রেভারেঞ্জ জিমি সেগাটের"সাথে বিতর্ক করেন।দেখা যায় আল্লাহ্‌র অশেষ মেহেরবানীতে তিনি জিমি সেগাটের আক্রমণের যথোপযুক্ত উত্তর দিতে সক্ষম হন।
আর এখন যে বিষয়টা আসবে তা হল তার লক্ষ্য আদৌ  ''ইসলামিক" ছিল কিনা???
"আই"- কুরআন ও সাহি হাদিস মোতাবেক ছিল???? হ্যা অবশ্যই।''এস''- ''স্পেসিফিক" ছিল কি??? হ্যায় অবশ্যই শুনিদৃষ্ট ছিল। যেমনঃ তার লক্ষ্য ছিল ইসলাম সম্পর্কে মানুষের মনে যে ভুলভ্রান্তি ছিল তা দূর করতে সাহায্য করা এবং যথাযথ জবাব নিশ্চিত করা।''এল"-''লুকরেটিভ" অর্থাৎ লাভজনক ছিল কি???? প্রথমত আখিরাত ও দ্বিতীয়ত দুনিয়ার জন্য। হ্যায় অবশ্যই তা ছিল। ১৯৮৬ সালে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় পুরস্কার ''কিংফয়সাল'' এ্যাওয়ার্ড সে লাভ করে মানবতার সেবা করার জন্য। আল্লাহ্‌ তাকে অবশ্যই আখিরাতেও ফলদান ইনশাআল্লাহ্‌।''এ''- তার লক্ষ্য কি ''এপ্রোপ্রিয়েট" ছিল??? হ্যায় তার লক্ষ্য অবশ্যই যথোপযুক্ত ছিল। খ্রিষ্টান মিশনারি যারা মুসলমানদেরকে অত্যাচার নিপীড়ন করতো তাদের জন্য এটা একটা যথোপযুক্ত উত্তর ছিল। পাশাপাশি তার বাগ্মিতা হাজার হাজার তরুণকে অনুপ্রেরণা দান করেছিল।''এম''-তার লক্ষ্য কি ''মেজারেবল'' অর্থাৎ পরিমাপযোগ্য ছিল??? হ্যায় তার লক্ষ্য অবশ্যই পরিমাপযোগ্য ছিল। কারণ তিনি খ্রিষ্টান মিশনারিদের বইসমূহ সংগ্রহ করে সেগুলো অধ্যয়ন করে তবেই যথাযথ উত্তর দিয়েছিলেন। ''আই''- তার ''ইনটেনশন''কি সঠিক ছিল???? হ্যায় তার নিয়ত অবশ্যই সঠিক ছিল। তার নিয়ত ছিল আল্লাহ্‌ ও রাসূলের সন্তুষ্টি অর্জন।''সি''- লক্ষ্যের মধ্যে ধারাবাহিকতা অর্থাৎ ''কনসিসটেন্সি'' ছিল কি??? হ্যায় অবশ্যই তার লক্ষ্যের মধ্যে  ''কনসিসটেন্সি'' ছিল।উপরে যে দুটি ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে তার মধ্যে মূল পার্থক্য কোথায় বলতে পারেন??? মূল পার্থক্য হচ্ছে তাদের লক্ষ্যে। ''উইলমা রুডলফ্‌'' এর লক্ষ্য ছিল-এই দুনিয়ায় দৌড় প্রতিযোগিতায় সফলতা অর্জন যা সে পেয়েছে।শেখ আহামেদ দিদাদ এর লক্ষ্য ছিল- আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জন এবং আখিরাতের আযাব থেকে মুক্তি লাভ। দুনিয়াতে তিনি ১৯৮৬ সালে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় পুরস্কার ''কিং ফয়সাল'' এ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হন। আখিরাতেও আল্লাহ্‌ তাকে পুরস্কৃত করবেন ইনশাআল্লাহ্‌।
যদি মহান আল্লাহ্‌ কাউকে এই দুনিয়ায় অর্থ সম্পদ দ্বারা পুরস্কৃত করেন তবে তার উপর নির্ভরশীল হওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে আমরা নবী হযরত সুলায়মানের উদাহরণ দিতে পারি। তিনি যথেষ্ট সম্পদশালী ছিলেন কিন্তু তিনি তার উপর নির্ভরশীল ছিলেন না। তাই এটাকে আমরা ''মুবাহ্‌" বলতে পারি।
আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ(সা:) এর ক্ষমতা, খ্যাতি, ও রাজা হওয়ার সম্পূর্ণ যোগ্যতা ছিল। কিন্তু মহানবী (সাঃ) কখনই তা প্রয়োগ করেননি বা ক্ষমতার অহংকার করেননি।মহানবী(স:) যে সকল উপহার পেতেন তার বেশিরভাগই তিনি তার সাহাবীদের দিয়ে দিতেন।
সুতরাং সম্পদশালী হলে তা আল্লাহর পথে ব্যয় করা অধিক বাঞ্ছনীয়। ব্যয় কুরআন ও সুন্নাহ্‌ মোতাবেক করা উচিৎ। কুরআন ও সুন্নাহ্‌র নির্দেশ সবসময় অনুসরণ করে চলতে হবে।তার অর্থ এই নয় যে নিজেকে ও নিজের পরিবারকে অবহেলা করা। দুনিয়ায় খ্যাতি অর্জনের পর তা আল্লাহ্‌র রাস্তায় ব্যবহার করতে হবে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে।
হযরত মুহাম্মাদ(সা:) পৃথিবীর সর্বকালের সব মানুষের জন্য আদর্শ। জর্জ বারনাডশ বলেছেনঃ '' আমি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্পর্কে পড়েছিলাম, আমার মনে হয়েছে তিনি একজন মানবতার রক্ষক''। থমাস কার্লাইল বলেনঃ '' ১ নম্বর হিরো হযরত মুহাম্মাদ (সা:)। লামা টিন ফ্রান্সের একজন বিখ্যাত ইতিহাসবিদ যিনি তুর্কিদের ইতিহাস লিখেছেন তিনি বলেনঃ''বিশাল কারণ, সীমিত প্রয়োজন , বিশাল ফলাফলের উপর ভিত্তি করে যদি একজন ব্যক্তিকে বিবেচনা করা হয় তবে সেই ব্যক্তিটি হবেন মুহাম্মাদ(সাঃ)।এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটেনিকার ৪র্থ সংস্করণে বলা হয়েছে-- '' এই পৃথিবীতে সবচেয়ে সফলইসলামি ব্যক্তিত্ব হযরত মুহাম্মাদ(সা:)''।পবিত্র কুরআনের সূরা আহযাবের ২১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে---''নিশ্চয়ই তোমাদের জন্য আল্লাহ্‌র রাসূলের চরিত্রে উত্তম (সুন্দর) আদর্শ রয়েছে, অবশ্য সেই ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ ও আখিরাতের দিনের আশা রাখে এবং আল্লাহ্‌কে অধিক স্মরণ করে''। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ(সা:) শুধুমাত্র ধর্মের ক্ষেত্রে নয় সামাজিক, রাজনৈতিক, সবখানে সফল নেতৃত্বের এক বাস্তব উদাহরণ। তিনি যেকোনো প্রকৃত মুমিনদার ব্যক্তির জন্য অনুসরণীয় আদর্শ।
এছাড়া পবিত্র কুরআনে এমন কিছু মহিলাদের উল্লেখ আছে যারা মহিলাদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ হতে পারে। যেমনঃ হযরত ঈসা (আঃ) এর মাতা মরিয়ম, ফেরাউন এর স্ত্রী আছিয়া, হযরত মুহাম্মাদ(সাঃ) এর প্রথম স্ত্রী খাদিজা, ও হযরত মুহাম্মাদ(সাঃ) এর প্রিয়তম কন্যা হযরত ফাতিমা (রাঃ)।
হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) নিজে বলেনঃ ''আল্লাহ্‌ একজন দুর্বল বিশ্বাসীর চেয়ে সবল বিশ্বাসীকে অধিক ভালোবাসেন''
ডাঃ জাকির নায়েক নিজের পরিবর্তনের কথাই সকলের সামনে তুলে ধরেন। শৈশবে আমি তোতলা ছিলাম। আমি নিজেকে কখনও মহান মনে করি না তবে আমি একজনই। আমি নিজেকে আল্লাহ্‌র বান্দা মনে করি । এখন আল্লাহ্‌র রহমতে আমি ১০,০০০ দর্শকের সামনে কথা বলতে পারি। আর অমুসলিমদের সাথে তো কথা বলার সময় তো কখনই আটকাই না।আমি এখন নিজেকে শারীরিক ডাক্তারের চাইতে মনের ডাক্তার হিসেবে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে করি। আমি এখন দীনের দাওয়াতের প্রসার ঘটানোর চেষ্টা করি। আমার দর্শন হচ্ছে যা কিছু করবো তা হবে ''ইউনিক''। আমি যখন ডাক্তারি পড়তাম তখন চিন্তা করতাম অস্কার এ্যাওয়ার্ড,গ্র্যামি এ্যাওয়ার্ড এ মানুষ এতো খরচ করে কেননা এই খরচ যদি আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য করা হয় তবে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় জায়গায় সফলতা পাবো মাসাল্লাহ্‌। তাই আমি চিন্তা করে পিস টিভি এর কাজ শুরু করি ও ''আই আর এফ" গঠন করি।

( পিস টিভি)




জীবনের লক্ষ্য

আসলে সাধারণভাবে আমাদের জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়া, সিভিল সার্ভিসে যাওয়া, ব্যবসায়ী হওয়া, বিজ্ঞানী হওয়া, অধ্যাপক হওয়া ইত্যাদি। কিন্তু এগুলো হলেই কি মানুষ হওয়া যায়?
যে ডাক্তার আরেকজন মানুষকে অজ্ঞান করে তার অজ্ঞাতসারে কিডনি অপারেশন করে বের করে বিক্রি করে দেয় তাকে কি মানুষ বলা যায়?
যে ইঞ্জিনিয়ার পারসেনটেজের পর পারসেনটেজ নিয়ে এমন স্থাপনা গড়ে যা ধ্বংসের কারণ হয় তাকে কি মানুষ বলা যায়?
যে সচিব নিজের দেশের স্বার্থকে বিক্রি করে দেয় তাকে কি মানুষ বলা যায়?
যে ব্যবসায়ী ড্রাগস, মদ বিক্রি করে, মানুষের জীবন ধ্বংসকারী জিনিস বিক্রি করে তাকে কি মানুষ বলা যায়?





যে অভিনেতা-অভিনেত্রী মানুষের জন্যে ক্ষতিকর বিজ্ঞাপনের মডেল হয় তাকে কি মানুষ বলা যায়?
যে বিজ্ঞানী মানুষ হত্যার জন্যে মরণাস্ত্র তৈরি করে তাকে কি মানুষ বলা যায়?
যে অধ্যাপকের হাতে তার ছাত্রীর সম্ভ্রম অনিশ্চিত থাকে তাকে কি মানুষ বলা যায়?
যদি বিদ্যা দ্বারা আমরা আলোকিত হতাম তাহলে জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত অনন্য মানুষ হওয়া যে, আমাকে মানুষ হতে হবে।
মানুষ হতে হলে তার লক্ষ্য হবে জৈবিক লালসা চরিতার্থ করা নয়, লক্ষ্য হবে সৃষ্টির সেবা করা। আর সৃষ্টির সেবার জন্যে প্রয়োজন হচ্ছে মেধার বিকাশ করা। আর পেশা হচ্ছে মেধাকে বিকশিত করার মাধ্যম। আমাকে আমার মেধাকে বিকশিত করতে হবে সৃষ্টিকে সর্বোত্তম সেবা করার জন্যে, জীবনের লক্ষ্য এটাই হওয়া উচিৎ। আর অর্থ বিত্ত খ্যাতি সবই আসবে বাই-প্রোডাক্ট হিসেবে। কারণ সেবা প্রদান করলে প্রকৃতির নিয়মেই এগুলো প্রতিদান হিসেবে আসবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এখন উপলক্ষ্যগুলোই আমাদের লক্ষ্য হয়ে গেছে।



(সংগৃহীত)