সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১২

সঠিক জীবনদৃষ্টি

মস্তিষ্করূপী বিস্ময়কর জৈব কম্পিউটার যথাযথভাবে ব্যবহার করার জন্যে প্রয়োজন সুসংহত মানসিক প্রস্তুতি। আর মানসিক প্রস্তুতির ভিত্তি হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি, নিয়ত বা অভিপ্রায়। কারণ মন পরিচালিত হয় দৃষ্টিভঙ্গি বা নিয়ত দ্বারা। আর মস্তিষ্ককে চালায় মন। বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ গবেষণা করেছেন মন ও মস্তিষ্কের সম্পর্ক নিয়ে। ডা. এলেন গোল্ডস্টেইন, ডা. জন মটিল, ডা. ওয়াইল্ডার পেনফিল্ড ও ডা. ই রয় জন দীর্ঘ গবেষণার পর বলেছেন, একজন প্রোগ্রামার যেভাবে কম্পিউটারকে পরিচালিত করে, তেমনি মন মস্তিষ্ককে পরিচালিত করে। মস্তিষ্ক হচ্ছে হার্ডওয়ার আর মন হচ্ছে সফটওয়ার। নতুন তথ্য ও নতুন বিশ্বাস মস্তিষ্কের নিউরোনে নতুন ডেনড্রাইট সৃষ্টি করে। নতুন সিন্যাপসের মাধমে তৈরি হয় সংযোগের নতুন রাস্তা। বদলে যায় মস্তিষ্কের কর্ম প্রবাহের প্যাটার্ন। মস্তিষ্ক তখন নতুন দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে নতুন বাস্তবতা উপহার দেয়। নতুন বাস্তবতা ভালো হবে না খারাপ হবে, কল্যাণকর হবে না ক্ষতিকর তা নির্ভর করে মস্তিষ্কে দেয়া তথ্য বা প্রোগ্রাম-এর ভালো-মন্দের ওপর। কল্যাণকর তথ্য ও বিশ্বাস কল্যাণকর বাস্তবতা সৃষ্টি করে আর ক্ষতিকর তথ্য বা বিশ্বাস ক্ষতিকর বাস্তবতা উপহার দেয়। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, জীবনের নতুন বাস্তবতার চাবিকাঠি হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি বা নিয়ত।

জীবনদৃষ্টি বা দৃষ্টিভঙ্গি কথার অর্থ হচ্ছে জীবনকে আমি কীভাবে দেখছি। জীবন সম্পর্কে আমার দৃষ্টিভঙ্গি কী বা জীবন সম্পর্কে আমার সিদ্ধান্ত কেমন হওয়া উচিত- এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট অভিমত। আর জীবনকে সুন্দর করার জন্যে যে একটি জিনিসেরই প্রয়োজন, তাহলো সঠিক জীবনদৃষ্টি। বাকি সবকিছু তখন এমনিই চলে আসে। কারণ চাবিটা যদি ঠিক থাকে আপনি তালাটা খুলতে পারবেন। তা নাহলে যত চাবি থাকুক আপনার কাছে, এটা যদি ঐ তালার চাবি না হয়, তাহলে সেই তালা খোলা যাবে না। জীবনের তালা, জীবনের বদ্ধ দরজা খোলার জন্যে যে সঠিক চাবি দরকার সেই চাবিটি অর্জন করার জন্যে প্রয়োজন সঠিক জীবনদৃষ্টি।

বিজ্ঞানীরা বলেন দৃষ্টিভঙ্গি দুধরনের। এক. প্রো-একটিভ। দুই. রি-একটিভ। প্রো-একটিভ অর্থ হচ্ছে যে কোনো পরিস্থিতিতে উত্তেজিত বা আবেগপ্রবণ না হয়ে ঠান্ডা মাথায় চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত ও প্রদক্ষেপ গ্রহণ। প্রো-একটিভ অর্থ হচ্ছে অন্যের কাজের প্রতিক্রিয়া হিসেবে কোনো কাজ বা আচরণ না করা। সর্বাবস্থায় নিজের লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে আচরণ ও কর্মপন্থা করা। প্রো-একটিভ অর্থ হচ্ছে কী কী নেই তা নিয়ে হা-হুতাশ না করে যা আছে তা নিয়েই সুপরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করা। প্রো-একটিভ দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় সাফল্য ও বিজয় ছিনিয়ে আনে।

অপরদিকে রি-একটিভ দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় ব্যর্থতা, হতাশা ও অশান্তি সৃষ্টি করে। রি-একটিভ হলে নিয়ন্ত্রণ তখন নিজের হাতে থাকে না। নিয়ন্ত্রণ চলে যায় অন্যের হাতে। আপনি যখন অন্যের কথায় কষ্ট পান, অন্যের কথায় রেগে যান, অন্যের আচরণে ক্রোধে ফেটে পড়েন, অন্যের তোষামোদিতে উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন, অন্যের চাটুকারিতায় গলে যান, অন্যের কথায় নাচেন, তখন নিয়ন্ত্রণ আর আপনার হাতে থাকে না। নিয়ন্ত্রণ চলে যায় অন্যের হাতে।

একজন প্রো-একটিভ মানুষের বৈশিষ্ট্য ৩টি :

১. তারা উত্তেজিত বা আবেগপ্রবণ না হয়ে ঠান্ডা মাথায় চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত ও প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

২. তারা কী কী নেই তা নিয়ে হা হুতাশ না করে যা আছে তা নিয়েই সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করেন।

৩. তারা সাময়িক ব্যর্থতায় ভেঙে পড়েন না

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন