জনপ্রিয় পোস্টসমূহ

বুধবার, ১৮ জানুয়ারী, ২০১২

মোবাইলফোনের অপব্যবহার ও আলোকিত সমাজের প্রত্যাশা

প্রযুক্তি তো জীবনকে সহজ করার জন্য, সুন্দর করার জন্য। অবশ্য এর জন্য প্রয়োজন হয় সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে প্রযুক্তির সদ্ব্যবহার হতে পারে, আবার হতে পারে অপব্যবহারও। আজকাল অবশ্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রযুক্তির অপব্যবহার চোখে পড়ার মতো। এ প্রসঙ্গে মোবাইলফোনের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। মোবাইলফোন এখন খুবই জনপ্রিয় একটি প্রযুক্তি। প্রতিদিনই এর গ্রাহক বাড়ছে। তবে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে এর চাহিদা বেশি। এদের অনেকেই একাধিক ফোন ও সিম ব্যবহার করে থাকে।
মোবাইলফোনের কোম্পানিগুলো তরুণ-তরুণীদের আকৃষ্ট করার জন্য নানা অফারও দিয়ে থাকে। এর মধ্যে একটি হলো গভীর রাতের সাশ্রয়ী অফার। রাত জেগে তরুণ-তরুণীরা আসলে ফোনের কতোটা সদ্ব্যবহার করে তা নিয়ে রীতিমতো গবেষণা হতে পারে। ইতোমধ্যে এ ব্যাপারে পত্রপত্রিকায় যেসব রিপোর্ট ও বিশ্লেষণ মুদ্রিত হয়েছে তাতে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে যে, রাতজাগা তরুণ-তরুণীদের দ্বারা মোবাইলফোনের অপব্যবহারই হচ্ছে বেশি। এর প্রভাব পরিবারে পড়ছে, বিরূপ প্রভাব পড়ছে তরুণ-তরুণীদের লেখাপড়া, স্বাস্থ্য এবং ব্যক্তিগত জীবনযাপনেও। মোবাইলফোনের মাধ্যমে আপত্তিকর ভিডিওচিত্র ধারণ বর্তমান সময়ের আর এক বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি খবর গত রোববার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। খবরে বলা হয়, মোবাইলফোনে ৮ম শ্রেণির এক ছাত্রীর আপত্তিকর ভিডিওচিত্র ধারণ করার অভিযোগে ৩ তরুণকে গ্রেফতার করেছে ৱ্যাব। ৱ্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরে তাদের প্রত্যেককে দু বছর করে কারাদণ্ড দেন। ঢাকার উত্তরার একটি মেসে গত শনিবার এ ঘটনা ঘটে। সাজা পাওয়া ৩ তরুণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
ৱ্যাবসূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার দুপুরে পূর্বপরিচিত এক যুবক ৮ম শ্রেণির এক ছাত্রীকে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের একটি মেসে নিয়ে যায়। সেখানে পারভেজ সরকার (২০), মাহবুব হাসান (২০) ও উদয় শর্মা (২০) নামের ৩ তরুণ ওই মেয়েটির আপত্তিকর ভিডিওচিত্র মোবাইলফোনে ধারণ করে। এরপর তারা মেয়েটির কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা দেয়া না হলে ভিডিওচিত্র ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়া হবে বলেও মেয়েটিকে ভয় দেখানো হয়। মেয়েটি মেস থেকে বেরিয়ে ৱ্যাব-১কে ঘটনাটি জানায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে ৱ্যাব ৩ তরুণকে হাতেনাতে আটক করে। আলোচ্য ঘটনা মোবাইলফোন তথা প্রযুক্তির অপব্যবহারের একটি নিকৃষ্ট উদাহরণ। আর কোনো অশিক্ষিত মানুষ নয়, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্ররা ওই ঘটনার সাথে জড়িত। পরিচিত একজন ছাত্র কেমন করে এক ছাত্রীকে ফাঁদে ফেলে এভাবে আপত্তিকর ছবি তুলে ব্লাকমেইল করে? বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পৌঁছার এ দীর্ঘ সময়ে ওই ছাত্ররা শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কিংবা নৈতিকতার কোনো পাঠই কী পায়নি কিংবা গ্রহণ করেনি? যদি না পেয়ে থাকে তাহলে এমন শিক্ষাব্যবস্থা দিয়ে জাতির কী লাভ? শুধু ছাত্রদের নয়, মেয়েটির রুচিবোধ, নীতিবোধ নিয়েও প্রশ্ন জাগে। কোন সাহসে মেয়েটি একাকি এক ছাত্রের আহ্বানে ছাত্রদের মেসে গিয়ে হাজির হয়।
প্রেমের নামে, নারী স্বাধীনতার নামে এমন অনাচার সমাজে কী করে চলে? এমন শিক্ষা ও সংস্কৃতি দিয়ে কী আলোকিত সমাজ গড়া সম্ভব? আর মোবাইলফোনের ব্যবহার ও অপব্যবহার নিয়ে সরকার, সমাজ ও পরিবারের বোধ হয় নতুন করে ভাবার প্রয়োজন রয়েছে। এরা ভাবলে মোবাইলফোন কোম্পানিগুলোও হয়তো তাদের প্রচার-প্রোপাগান্ডায় নৈতিক মানদণ্ড নিয়ে ভাবতে বাধ্য হবে। তাদেরও আত্মসমালোচনা প্রয়োজন।

 
 লেখক ,
 রেজা জোয়ারদার    ( সংগৃহীত )











কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন